মুখ্যমন্ত্রী বদলে হরিয়ানায় ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে বিজেপি
অবশেষে বদল হলেন বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার। মঙ্গলবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি ও কুরুক্ষেত্র লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত অনগ্রসর নেতা নায়েব সিং সৈনি। বিকেল পাঁচটায় তিনি নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১০ বছর আগে, ২০১৪ সালে, মনোহররাল খাট্টার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। যে কারণে ভোটের আগে উত্তরাখন্ড, গুজরাট বা কর্ণাটকে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বে বদল ঘটিয়েছে, সেই যুক্তিতেই হরিয়ানাতেও বদল ঘটানো হলো। রাজ্য বিধানসভার ভোট এই বছরের অক্টোবরে। নেতৃত্বের বদল ঘটিয়ে বিজেপি চাইছে মানুষের ক্ষোভ প্রশমন করতে। সেই কারণে নতুন মুখ।
জাতিগতভাবে জাট প্রভাবিত হরিয়ানায় বানিয়া সম্প্রদায়ের মনোহরলাল খাট্টারকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি নেতৃত্ব ১০ বছর আগে ঝুঁকিরই পরিচয় দিয়েছিল। ১০ বছর ধরে খাট্টার যদিও সব রাজনৈতিক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে এগিয়েছেন। ২০২০–২১ সালের কৃষক আন্দোলন কিংবা ধর্মীয় সংগঠন ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান ধর্মগুরু গুরমিত রামরহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে রাজ্য যখন উত্তাল, তখনো তিনি তাঁর গদি সামলে নিয়েছিলেন। এবার তাঁকে সরতে হলো তৃতীয় দফার ভোটের আগে নতুন মুখ আনার তাগিদ অনুভূত হওয়ায়। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের ধারণা, ১০ বছর ধরে মানুষের মনে যতটুকু ক্ষোভ জন্মেছে, এই পরিবর্তনের ফলে তা প্রশমিত হবে।
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ত্বরান্বিত হয় সরকারের শরিক দল জননায়ক জনতা পার্টির (জেজেপি) সঙ্গে লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন সমঝোতা না হওয়ায়। জেজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি পাঁচ বছর ধরে রাজ্য শাসন করে আসছে। গত বিধানসভা ভোটে ৯০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি পেয়েছিল ৪১ আসন, কংগ্রেস ৩০টি। জাটপ্রধান দল জেজেপি পেয়েছিল ১০ আসন। এর বাইরে ৭ জন স্বতন্ত্র এবং আইএনএলডি ও হরিয়ানা লোকহিত পার্টি একটি করে আসন জিতেছিল। ভোটের পর সরকার গড়তে জেজেপি হাত মিলিয়েছিল বিজেপির সঙ্গে। জেজেপি নেতা দুষ্মন্ত চৌটালা হন উপমুখ্যমন্ত্রী।
বিবাদ বাধে লোকসভা ভোটের আসন সমঝোতা নিয়ে। রাজ্যের ১০ লোকসভা আসনের মধ্যে জেজেপি দুটির দাবি জানায়। বিজেপি একটিও ছাড়তে রাজি হয় না। বরং তারা তলেতলে জেজেপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। বিজেপি বুঝেছিল, লোকসভায় আসন না পেলে জেজেপি সরকার ছেড়ে দিতে পারে। তার আগেই মুখ্যমন্ত্রীকে বদলে ও স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিজেপি সচেষ্ট হয় জেজেপিতে ভাঙন ধরানোর। দুষ্মন্ত চৌটালার ডাকা বিধায়কদের বৈঠকে মঙ্গলবার ৫ জন গরহাজির হন। তখনই বোঝা যায় হরিয়ানার ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে।
৬৭ বছরের মনোহরলাল খাট্টার আরএসএসের পুরোনো সৈনিক। সংঘে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। রাজ্য থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলেও বিজেপি তাঁকে এবার লোকসভায় প্রার্থী করতে চলেছে। কারনাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১৯ সালের ভোটে বিজেপি রাজ্যের ১০টি আসনের প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছিল। তাদের ধারণা, এবারও তারা একার ক্ষমতায় ১০ আসনেই জয়ী হবে।
রাজ্যের কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য দেপীন্দর সিং হুডা এই বদল সম্পর্কে আজ মঙ্গলবার বলেন, রাজ্যের মানুষ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বলেই বিজেপি নেতৃত্বের বদল ঘটাল। এসব করে তারা বাঁচতে পারবে না। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, কৃষকেরা চাপ সৃষ্টি করেছেন। কুস্তিগিরেরাও। সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত। রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। মুখ্যমন্ত্রী বদলেও বিজেপির লাভ হবে না।