দিল্লিতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষিকা বললেন, ‘তোমাদের পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়নি কেন?’

ভারতের একটি শ্রেণিকক্ষ
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের পর এবার দিল্লির এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে চার মুসলিম শিক্ষার্থী বলেছে, অভিযুক্ত শিক্ষিকা তাদের বলেছেন, ‘দেশভাগের সময় তোমাদের পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়নি কেন?’

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম হেমা গুলাটি। তিনি দিল্লির গান্ধী নগরের সর্বোদয়া বাল বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিপড়ুয়া চার শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বলেছে, তারা এই অভিযোগ পাওয়ার পরে মামলা নিয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বুধবার নবম শ্রেণিতে ক্লাস নিতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন হেমা। তিনি পবিত্র কোরআন ও পবিত্র কাবা নিয়ে বিতর্কিত কথা বলেন। এ ছাড়া মুসলিম শিক্ষার্থীদের হেমা বলেন, ‘দেশভাগের সময় তোমাদের পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়নি। তোমরা ভারতে থেকেছো। ভারতের স্বাধীনতার জন্য তোমাদের (মুসলিমদের) কোনো অবদান নেই।’

পরে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্যদের কাছে এসব কথা বলে। এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা থানায় গিয়ে শিক্ষিকা হেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁদের ভাষ্য, ধর্ম নিয়ে শিক্ষিকার এমন বিতর্কিত মন্তব্য বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাঁরা ওই শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছেন।

ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মা সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বলেন, ‘যদি ওই শিক্ষিকাকে শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে অন্যরাও এমন কথা বলতে উৎসাহিত হবেন। শিক্ষকদের বলা উচিত, তাঁদের কাজ কেবল শিক্ষার্থীদের শেখানো। যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, সেই বিষয় নিয়ে কথা না বললেও চলবে।’

ওই অভিভাবক আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষিকা তাঁর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারেন না। আমরা চাই ওই শিক্ষিকাকে (হেমা) বরখাস্ত করা হোক। তাঁর কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করা উচিত নয়।’

আরও পড়ুন

স্থানীয় এমএলএ ও আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অনিল কুমার বাজপেয়ী শিক্ষিকা হেমাকে ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এটা খুবই ভুল। একজন শিক্ষিকার দায়িত্ব শিশুদের ভালো জিনিস শেখানো। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকা কখনোই ধর্ম ও পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে কটাক্ষ করতে পারেন না। এ ধরনের মানুষদের গ্রেপ্তার করা উচিত।

এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি বিদ্যালয়ে এক মুসলিম শিক্ষার্থীকে সহপাঠীদের দিয়ে চড় মারানোর ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা দেখা দেয়। অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম তৃপ্তি ত্যাগী। তিনি মুজাফফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামের নেহা পাবলিক স্কুলের মালিক ও প্রধান শিক্ষক।

ভারতজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পুলিশ মুজাফফরনগরের ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়টি। ভুক্তভোগী ওই মুসলিম শিক্ষার্থীকে পাশেই অন্য একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর পরিবার অভিযুক্ত শিক্ষক তৃপ্তির কঠিন শাস্তি দাবি করেছে। যদিও তারা আইনগত পদক্ষেপ নিতে নারাজ।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ৬০ বছর বয়সী তৃপ্তি বলেছেন, তাঁর আচরণের জন্য তিনি মোটেও লজ্জিত নন। তৃপ্তি আরও বলেন, তাঁরা আইন বানিয়েছেন। তবে স্কুলে শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এভাবেই শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আরও পড়ুন