বাংলাদেশের ইলিশ: সাধ মেটাতে পারেনি কলকাতার বহু ইলিশপ্রিয় মানুষের
পশ্চিমবঙ্গের মাছের পাইকারি বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাতটি ট্রাকে করে বাংলাদেশের ইলিশ পৌঁছায়। গতকাল শেষ রাতে কলকাতার শিয়ালদহ, হাওড়া, পাতিপুকুর ও দার্জিলিংয়ের শিলিগুড়ির পাইকারি মাছের বাজারে পৌঁছার পর মাছগুলো ঝুড়িতে করে নিলামে তোলা হয়। আমদানিকারকদের নিলাম থেকে পাইকারি ক্রেতারা তা কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর তা চলে যায় কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন খুচরা বাজারে।
কিন্তু প্রথম চালানে কম ইলিশ আসায় কলকাতার অধিকাংশ বাজারে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশ। অন্যদিকে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আজ শুক্রবার বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ পাননি। এ দফায় উচ্চবিত্তের মানুষেরাই বেশি দামে বাংলাদেশের ইলিশ কিনে রসনা তৃপ্ত করেছেন।
অনেকের অভিযোগ, পূজার মৌসুমে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় প্রথম চালানের ইলিশের বড় অংশ চলে গেছে কলকাতার নামীদামি হোটেলে। কলকাতার বেশ কিছু খুচরা বাজারে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে আজ প্রথম দিন বাংলাদেশের ইলিশ পাওয়া যায়নি।
গতকাল পশ্চিমবঙ্গের বেনাপোল-হরিদাসপুর বা পেট্রাপোল সীমান্তপথে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বাংলাদেশের ইলিশের প্রথম চালান। কলকাতার ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল প্রথম দিনে ৪০ থেকে ৫০ টন ইলিশ এসেছে। সকালে তা পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য নিলামে ওঠে। নিলামে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ রুপিতে। আর এক কেজি ও তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপিতে। এরপর এসব ইলিশ খুচরা বাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার চলতি বছর ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে। ১২ অক্টোবরের মধ্যে এসব ইলিশ আমদানি করতে হবে। ফলে দ্রুততার সঙ্গে এই ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে কলকাতার ইলিশ আমদানিকারকেরা। আজ শুক্রবার স্থলবন্দরে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ইলিশ আসেনি। তবে কাল শনিবার থেকে ফের আসা শুরু হবে।
বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর। তবে কলকাতার ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তারা এক আবেদনে বলেছেন, রপ্তানির সময়সীমা যেন সংক্ষিপ্ত করা না হয়। গত বছর সময়স্বল্পতার কারণে ঘোষিত রপ্তানির পরিমাণ মাছ কলকাতায় আসেনি। গত বছর রপ্তানির পরিমাণ ৩ হাজার ৯৫০ টন নির্ধারিত হলেও এসেছিল মাত্র ৫৮৭ টন।
বাংলাদেশ সরকার কলকাতার ইলিশপ্রিয় বাঙালিদের কথা মাথায় রেখে গত ৫ বছর ধরে দুর্গাপূজার মৌসুমে বিশেষ ব্যবস্থায় ইলিশ রপ্তানি করে আসছে। এ বছরের পূজাও দ্বারপ্রান্তে। ৮ অক্টোবর থেকে শুরু। তাই এ বছরও যাতে কলকাতাসহ ভারতের ইলিশপ্রিয় মানুষ বাংলাদেশের ইলিশ থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য কলকাতায় যাতে আগেভাগেই ইলিশ রপ্তানি হয়, রাজ্যের ইলিশ আমদানিকারকেরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন।
২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল; কিন্তু রপ্তানির সময়সীমা কম থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তখন কেবল ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিলেও পশ্চিমবঙ্গে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও সময়ের স্বল্পতার কারণে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল ৫৮৭ মেট্রিক টন।