কর্ণাটকে বিজেপিবিরোধী শিবিরে তোড়জোড় কেন
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে কংগ্রেসের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও সংযুক্ত জনতা দলের (জেডিইউ) নেতা নীতীশ কুমার ১৭ বা ১৮ মে পাটনায় বিজেপিবিরোধী সমভাবাপন্ন দলগুলোর বৈঠকের আয়োজন করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো অবশ্য দিন ঘোষণা হয়নি।
নীতীশ চাইছেন তার আগেই বাকি সব দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলতে। সেই উদ্দেশ্যে নীতীশ ও তাঁর সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব আজ বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করছেন। বৈঠক করবেন শিবসেনা (উদ্ধব) গোষ্ঠীর নেতা উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও।
কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠকের পর গত মাস থেকেই বিরোধী জোট গঠনে নীতীশ তৎপর। ইতিমধ্যেই তিনি বৈঠক করেছেন আম আদমি পার্টির নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে। ফোনে আলোচনা সেরেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গেও। মুম্বাই সফর সেরে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ঠিক আছে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস আর কংগ্রেস, তেলেগু দেশমের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গেও বিরোধী ঐক্য নিয়ে কথা বলবেন নীতীশ। বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তেজস্বী যাদব সব সময় তাঁর সঙ্গে থাকছেন।
নীতীশের সঙ্গে বৈঠকের পর ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক আজ দিল্লি এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। দিল্লি থাকাকালীন বিজেপি ছাড়া বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গেও তাঁর দেখা হওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও বিজেডির দলীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর পুরোপুরি রাজ্যের স্বার্থে। রাজনৈতিক নয়। ইউপিএ ও এনডিএ দুই জোট থেকেই বিজেডি সমদূরত্ব বজায় রাখার রাজনীতি করে চলেছে।
কংগ্রেস কর্ণাটক দখল করতে পারলে বিরোধী ঐক্য প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবেই গতি পাবে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে গত মাসের বৈঠকে মোটামুটিভাবে ঠিক হয়েছিল, ন্যূনতম কিছু কর্মসূচি তৈরি করে সম্মিলিতভাবে ২০২৪ সালে বিজেপির মোকাবিলায় সমভাবাপন্ন বিরোধী দলগুলোর নামা উচিত।
কর্ণাটক নির্বাচন উপলক্ষে যেসব সংস্থা প্রথমে জনমত জরিপ ও পরে বুথফেরত সমীক্ষা করেছে, সেখানে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার কাছাকাছি কোনো বিরোধী নেতা নেই। অধিকাংশ জরিপে এটাও স্পষ্ট, রাজ্যে কংগ্রেসকে পছন্দ করলেও লোকসভা ভোটে মোদিই রাজ্যবাসীর পছন্দের নেতা।
২০১৮ সালে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও তার পরের বছর ২০১৯ সালে সেই রাজ্যেই লোকসভার ভোটেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যেমন ২০১৯ সালে কর্ণাটকে বিজেপি ২৮–এর মধ্যে ২৬, মধ্যপ্রদেশে ২৯টির মধ্যে ২৮, ওডিশায় ২১–এর মধ্যে ৮, রাজস্থানে ২৫ আসনের প্রতিটি, দিল্লির ৭টির মধ্যে ৭, ছত্তিশগড়ে ১১টির মধ্যে ৯ এবং গুজরাটে ২৬ আসনই বিজেপি জেতে। অথচ কর্ণাটকে আগের বছর কংগ্রেস ও জেডিএস সরকার গড়েছিল। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস সরকার গড়েছিল। ওডিশায় বিপুল ভোটে জিতেছিল বিজেডি। গুজরাটের ভোটেও কংগ্রেস বিধানসভায় ৭৮টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু লোকসভায় মোদি সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। এই মনোভাব কর্ণাটকে এখনো অপরিবর্তিত।
এ সত্ত্বেও বিরোধীরা মনে করছেন, জোটবদ্ধ হলে এবং যে দল যে রাজ্যে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির মোকাবিলা করতে দেওয়া হলে ভোট ভাগাভাগি রুখে বিজেপির আসনসংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।