মণিপুরে কুকি নারী হত্যার জেরে এক মেইতেই নারীকে হত্যা
ভারতের মণিপুরে গতকাল শনিবার বিকেলের দিকে মেইতেই সম্প্রদায়ের এক নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তিন সন্তানের মা ওই নারীকে বিষ্ণুপুর জেলায় একটি ধানের খেতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী। পুলিশ জানিয়েছে, কুকি জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ওই নারীকে হত্যা করেছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনাকে বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসামঘেঁষা পশ্চিম মণিপুরের জিরিবাম জেলায় এক নারীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ করে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হয়। তিনিও তিন সন্তানের মা ছিলেন।
জিরিবাম জেলার ওই নারী ছিলেন হামর গোষ্ঠীভুক্ত। হামর, জোমি ও কুকি—এই তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে ‘জো’ বলে চিহ্নিত করা হয়। অনেক সময় এই তিন গোষ্ঠীসহ অন্য আরও ছোট গোষ্ঠীকে মিলিয়ে শুধু আদিবাসী বা কুকি বলে চিহ্নিত করা হয়। মণিপুরে আদিবাসীদের মধ্যে কুকিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
পশ্চিম মণিপুরের জিরিবাম জেলায় বৃহস্পতিবার ওই নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার পর গত শুক্রবার থেকে মণিপুরের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে নতুন করে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। জিরিবামে নিহত নারীর পরিবারের জন্য বিচার চেয়ে শনিবার কুকি-অধ্যুষিত কাংপোকপি ও চূড়াচাঁদপুর জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে মধ্য মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার সাইতন এলাকায় মেইতেই সম্প্রদায়ের এক কৃষক নারীকে গুলি করে হত্যা করা হলো।
সাইতনসহ মণিপুরের নিচু উপত্যকা অঞ্চলের বেশির ভাগ গ্রাম এখনো পর্যন্ত রয়েছে কুকিসহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। ফলে মেইতেই অঞ্চলে কাউকে হত্যা করা হলে কুকি অঞ্চলে প্রতিহিংসার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এবং দুই ক্ষেত্রেই মারা যাচ্ছেন গ্রামের একেবারে সাধারণ মানুষ। দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছেই রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। দুই পক্ষই তৈরি করেছে গ্রাম প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, যারা এই আগ্নেয়াস্ত্র নিজেদের আত্মরক্ষার দাবি তুলে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
ভারতের সংঘাতবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করছে, পরিস্থিতি সরকারের এবং দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে কিছুদিন আগে উত্তর-পূর্ব ভারত বিশেষজ্ঞ প্রদীপ ফানজৌবাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অবিলম্বে যাবতীয় অস্ত্র সরকার নিজের হাতে নিয়ে আসতে না পারলে মণিপুরে শান্তি ফেরানো অসম্ভব। কিন্তু বারবার আবেদন করেও লুট হওয়া অস্ত্র সরকারের হাতে ফেরত আসেনি। সে কারণেই ধারাবাহিকভাবে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে মণিপুরে। বিষ্ণুপুরের মেইতেই নারী হত্যার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, রোববার মেইতেই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে ধারাবাহিক সংঘাতে মণিপুরে এখনো পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় ২৫০ জন মারা গেছে। এখনো গৃহহীন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।