কর্ণাটকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চাকরির কোটা চালুর সিদ্ধান্ত

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াছবি: এএনআই

ভারতের কর্ণাটকের কংগ্রেসদলীয় সরকার রাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষণব্যবস্থা চালু করতে চলেছে। রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভা সে জন্য একটি বিলে অনুমোদন দিয়েছে। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ লাড আজ বুধবার জানিয়েছেন, রাজ্যের সব বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপক পদমর্যাদার ৫০ শতাংশ চাকরি কর্ণাটকের কন্নড়ভাষীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ব্যবস্থাপক পদমর্যাদার নয়, এমন পদের ৭০ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে স্থানীয়দের জন্য।

শ্রমমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যার আগেই অবশ্য রাজ্যে অশান্তি ও অসন্তোষ দেখা দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার একটি পোস্ট ঘিরে। গতকাল মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী সেই পোস্টে লিখেছিলেন, রাজ্যের সব বেসরকারি সংস্থার গ্রুপ ‘সি’ ও ‘ডি’ পদের শতভাগ চাকরি স্থানীয়দের দিতে হবে। ওই পোস্টের পরেই রাজ্যের মারাঠা ও তেলুগুভাষী অঞ্চলে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষোভ শুরু হয়। অশান্তির খবর পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী সেই পোস্ট মুছে দেন। তারপর আজ বুধবার শ্রমমন্ত্রী সরকারি সিদ্ধান্তের নতুন ব্যাখ্যা দেন।

সন্তোষ লাডের ব্যাখ্যায় গ্রুপ ‘সি’ ও ‘ডি’-তে নিয়োগসংক্রান্ত কোনো উল্লেখ ছিল না। মন্ত্রিসভায় যে খসড়া বিল পাস হয়েছে, তাতেও এই দুই পদমর্যাদার কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত কোনো উল্লেখ নেই। তবে মন্ত্রী বলেন, ‘কর্ণাটকের ভূমিপুত্ররা যাতে চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চিত না হন, সরকার তা নিশ্চিত করতে চায়। মাতৃভূমিতে সুখের জীবন গড়ে তুলতে সরকার তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে চায়।’

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার পোস্টের পর কর্ণাটকের শিল্পমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বায়ো ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থা বায়োকনের চেয়ারপারসন কিরণ মজুমদার আজ বুধবার ‘এক্স’ মারফত জানান, ‘প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষতা আমাদের প্রয়োজন। স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা স্থানচ্যুত হই। দক্ষতমদের চাকরি দানের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিতে অবশ্যই শিথিলতা থাকা জরুরি।’

বেঙ্গালুরুতে ৮০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা প্রযুক্তি হাব ইলেকট্রনিক সিটিতে বায়োকন ছাড়াও ইনফোসিস, উইপ্রো, টেক মাহিন্দ্রর মতো বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। শুধু বায়োকনের কর্মীর সংখ্যা সাড়ে ১৬ হাজার। এই শিল্পমহলের অনেকেই মনে করছেন, সরকার অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে বহু সংস্থা রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। নতুন শিল্পও রাজ্যে আসবে না।

মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের পর বণিকসভা ‘অ্যাসোচ্যাম’-এর সহসভাপতি আর কে মিশ্রও ‘এক্স’ মারফত জানান, সরকারের নীতি প্রযুক্তি সংস্থাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো। এ সিদ্ধান্তকে তিনি অদূরদর্শী বলে মনে করেন।

সমালোচনার মুখে শ্রমমন্ত্রী জানান, তিনি শিল্পমহলের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁদের ভয় দূর করবেন। রাজ্যের শিল্প–বাণিজ্যমন্ত্রী এইচ বি পাতিলও বলেন, শিল্পমহল শঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাদের শঙ্কা সরকার দূর করবে। সরকারি সিদ্ধান্তে শিল্পমহলের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, তা দেখা হবে।

কর্ণাটকের সরকার বেসরকারি চাকরিতে ‘কোটাব্যবস্থা’ চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের শরিক রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মন্ত্রী রামদাস আটোয়ালে দাবি করেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত, সব বেসরকারি সংস্থায় অতি অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য চাকরি সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা।

কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক ন্যায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আটোয়ালে। তিনি বুধবার বলেন, অতি অনগ্রসর শ্রেণির লোকেরা হন্যে হয়ে চাকরি খোঁজেন। সরকারি সংস্থাগুলোও বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে সরকারি সংস্থায় নিযুক্তি কমে গেছে। সরকারের তাই উচিত, বেসরকারি সংস্থায় এই শ্রেণির জন্য কোটা চালু করা।

হরিয়াণায় অগ্নিবীরদের জন্য সরকারি সংরক্ষণ

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে স্বল্প মেয়াদের জওয়ান নিয়োগ বা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প নিয়ে জেরবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের সর্বত্র এই চুক্তিভিত্তিক চাকরি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় কংগ্রেস জানিয়েছিল, তারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্প বাতিল করে দেবে। এই অসন্তোষ সামাল দিতে বুধবার হরিয়াণা সরকার জানিয়েছে, তারা সরকারি চাকরিতে অগ্নিবীরদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।

হরিয়াণার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি আজ বুধবার বলেন, সেনাবাহিনীতে চার বছরের চাকরির মেয়াদ শেষে যাঁরা ঘরে ফিরবেন, তাঁদের সরকারি চাকরিতে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। বয়সের ক্ষেত্রে তাঁদের তিন বছর অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হবে। সরকারি চাকরির গ্রুপ ‘বি’তে ১ শতাংশ ও গ্রুপ ‘সি’তে ৫ শতাংশ পদে তাঁদের নেওয়া হবে। প্রথম ব্যাচের অগ্নিবীরদের ক্ষেত্রে অবশ্য বয়সের ছাড় হবে ৫ বছর। এ ছাড়া রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল, খনিপ্রহরী, বনপ্রহরী, জেলের ওয়ার্ডেনসহ কিছু পদে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হবে।

হরিয়াণা বিধানসভার ভোট চলতি বছরের নভেম্বরে। গত লোকসভা ভোটে এ রাজ্যের মোট ১০ আসনের মধ্যে বিজেপি মাত্র পাঁচটিতে জয়ী হয়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছে বাকি ৫টি। আগের লোকসভায় রাজ্যের ১০ আসনই ছিল বিজেপির।