সেই নিখিল চান, ভারত সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিক
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্ত সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। হেবিয়াস কর্পাস আবেদনে তাঁর আরজি, ভারত সরকার এ মামলায় হস্তক্ষেপ করুক। চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তাঁকে যাতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা না হয়, সে জন্য ভারত সরকারকে উদ্যোগী হতে আবেদন করেছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট নিখিলের এই আবেদন শুনবেন আগামী ৪ জানুয়ারি। নিখিলের আরজি, তাঁকে মুক্ত করার যাবতীয় চেষ্টা ভারত সরকার করুক।
গুরপতবন্ত সিং পান্নুন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নাগরিক। ‘শিখস ফর জাস্টিস’ নামের এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ভারতে ওই সংগঠন নিষিদ্ধ। ভারতের চোখে পান্নুন সন্ত্রাসী। তাঁর সংগঠন স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার। সেই উদ্দেশ্যে তিনি বিদেশে থেকে ভারতবিরোধী প্রচার চালান।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত সরকার পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। সে কাজে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত এক ভারতীয় কূটনীতিক জড়িত ছিলেন। পান্নুনকে হত্যার জন্য তিনি ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তকে (৫২) নিযুক্ত করেছিলেন। নিখিল ভাড়া করেছিলেন এক খুনিকে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন গোয়েন্দা বা আন্ডার কভার এজেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র নিখিলকে ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে আটক করেছে। আপাতত তিনি সেখানে বন্দী। বিচারের জন্য তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে হেবিয়াস কর্পাসের আবেদন করা হয়। আবেদন জানান নিখিলের পরিচিত একজন। বিচারপতি বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত স্পর্শকাতর’ বর্ণনা করে আবেদনকারীকে বলেন, যে দেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেখানকার আদালতে আবেদন জানাতে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিদেশে কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে সুপ্রিম কোর্টের করণীয় কিছু নেই।
বিচারপতি প্রথমে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তি অর্থাৎ নিখিল নিজে কোনো হলফনামা পেশ করেননি। বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হলে আবেদনকারীকে সেই দেশেই যেতে হবে প্রতিকারের জন্য। কিন্তু পরে তিনি বিষয়টি শুনতে রাজি হন। আবেদনকারীকে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আবেদনপত্র জমা দিতে বলেন। আগামী ৪ জানুয়ারি মামলাটি শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
নিখিল গুপ্তর পক্ষে আবেদনকারী জানিয়েছেন, তাঁকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও দাখিল করা হয়নি, তা ছাড়া নিখিলের মানবিক অধিকারও হরণ করা হয়েছে। তাঁকে জোর করে গরু ও শুয়োরের মাংস খাওয়ানো হয়েছে। অথচ তিনি পুরোপুরি নিরামিষাশী।
যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার পর সে দেশের আদালতে নিখিল দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে ২০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। কোন ভারতীয় কূটনীতিক পান্নুন হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাঁর পরিচয় যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এখনো গোপন রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ভারত অস্বীকার করেনি। বিষয়টি ‘গুরুতর’ জানিয়ে ভারত সরকার বলেছে, এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এ অভিযোগ তদন্তে ভারত সরকার একটি কমিটিও গঠন করেছে।