ভারতের অন্যতম সংবিধান ও আইনবিশেষজ্ঞ এ জি নুরানী আর নেই
ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব ও সংখ্যাগুরুর ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম করে তোলার বিপদ নিয়ে সারা জীবন লেখালেখি করা আন্তর্জাতিক স্কলার, রাজনীতি বিশ্লেষক এবং আইনজীবী আবদুল গফুর মজিদ নুরানী (এ জি নুরানী) আজ বৃহস্পতিবার ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩।
ভারতের সংবিধানের অন্যতম বিশেষজ্ঞদের যে দু-একজন জীবিত আছেন, তাঁদের একজন ছিলেন এ জি নুরানী। দীর্ঘ সাত দশক ধরে তিনি লিখেছেন ভারতে হিন্দুত্ববাদের বিপদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে। একাধিক বই লেখার পাশাপাশি তিনি আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন মুম্বাই হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে।
কাশ্মীর নিয়েও এ জি নুরানী প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং বই লিখেছেন। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের নেপিয়ানসি রোডে তাঁর বাড়িতে এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নুরানী কাশ্মীর নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অবস্থানের সমর্থনে বলেছিলেন, সেখানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই উচিত কাজ হবে।
তবে আবার কংগ্রেস সরকার যখন কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়েছিল, তখন তাঁর আইনজীবী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন নুরানী। কাশ্মীর নিয়ে এমন একটি বই নুরানী লিখেছেন, যা বেশ সমাদৃত।
‘দ্য কাশ্মীর ডিসপিউট ১৯৪৭-২০১২’ নামের এই বইয়ে কাশ্মীর নিয়ে এমন সব দলিল-দস্তাবেজ নুরানী প্রকাশ করেছেন, যা অতীতে প্রকাশিত হয়নি। কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তানের রাজনীতি বোঝার অন্যতম প্রধান বই হিসেব ‘কাশ্মীর ডিসপিউট’ বিশ্বে পরিচিত।
ভারতসহ বিশ্বের একাধিক জনপ্রিয় সংবাদপত্রের কলাম লেখক নুরানী একাধিক বই লিখেছেন, যার মধ্যে কাশ্মীর ডিসপিউট ছাড়াও সমাদৃত বইয়ের মধ্যে রয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নিয়ে অন্তত দুটি বই এবং অজস্র লেখা।
ভারতের সংবিধান নিয়ে অন্তত দুটি বই লিখেছেন। এ ছাড়া ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা, রাশিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে মুম্বাই হাইকোর্টের প্রথম ভারতীয় আইনজীবী এবং আইনবিশেষজ্ঞ বদরুদ্দীন তায়েবজি থেকে স্বাধীনতাসংগ্রামী ভগৎ সিংকে নিয়েও বই লিখেছেন নুরানী।
তিন দশক ধরে নুরানী ভারতের সংবিধান নিয়ে কলাম লিখেছেন ‘ফ্রন্টলাইন’ পত্রিকায়। তিনি নিজে কখনো কোনো সাংবিধানিক পদে না থাকলেও তাঁর এই কলাম ভারতের বিচারব্যবস্থাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে বলে মনে করা হয়।
অবশ্য নুরানীর সমালোচকদের একাংশ বলেছেন, তাঁর পরামর্শ অনেক সময়ই প্রবল আদর্শবাদী এবং খাতায়-কলমে অভ্যাস করা মুশকিল। তবে তাঁর কলমের জোর বা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বকে কেউই কখনো খাটো করতে পারেননি। সেই নেহরুর আমল থেকে নরেন্দ্র মোদির সময় পর্যন্ত।
নুরানীর মৃত্যুতে সমাজের নানা স্তরের মানুষ শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।