অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তথা দরিদ্রদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আজ সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এই রায় দেন। প্রধান বিচারপতি ললিত ও বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট সংরক্ষণের বিরুদ্ধে মত দিলেও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জে জে পর্দিওয়ালা সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, সরকারি এই সিদ্ধান্ত সংবিধান লঙ্ঘনকারী নয়।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে হারার পর ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনী এনে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল শ্রেণির জন্য সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধনীতে বলা হয়, যে প্রার্থীদের পরিবার কর দেওয়ার উপযোগী নয়, অর্থাৎ যাঁদের বার্ষিক আয় ৮ লাখ রুপির কম, তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকবে। কংগ্রেসসহ বিরোধীরা এই আইনের বিরোধিতা না করলেও তামিলনাড়ু রাজ্যসহ বহু সংগঠন মোদি সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হন।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ৪০টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনকারীদের দাবি, কোটা সর্বোচ্চ কত শতাংশ হবে, তা সুপ্রিম কোর্টই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী মোট কোটা কখনো ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না।
এ মামলা নিয়ে প্রথমে তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হয়। পরে সেই বেঞ্চ এই মামলা পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে পাঠানোর সুপারিশ করেন। টানা সাত দিন শুনানি শেষে গত সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ আদালত রায় স্থগিত রাখেন।
আজ রায়ের সময় বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী বলেন, কোটা সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই সাংবিধানিক কাঠামো ও সাম্যের নীতি লঙ্ঘনকারী নয়। বরং এতে সমাজে সমতা রক্ষার কাজ সহজ হবে। দরিদ্র ব্যক্তিদের মূল স্রোতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বিচারপতি বেলা ত্রিবেদীও মনে করেন, জেনারেল ক্যাটাগরির মানুষের সঙ্গে গরিবদের সমানভাবে তুলনা হয় না। এই ধরনের শ্রেণি বিভাগে সমানাধিকারের নিয়ম লঙ্ঘিত হয় না।
সংখ্যাধিক্যের এই রায়ে মত দেননি প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত ও বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট। তাঁরা মনে করেন, এই সংরক্ষণ সংবিধানের মূলনীতি ও আদর্শের বিরোধী, বেআইনি ও বৈষম্যমূলক। প্রধান বিচারপতি ললিতের আমলে এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত অবসর গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি পর্দিওয়ালা কোটার পক্ষে মত দিলেও বলেন, কোনো সংরক্ষণই অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না, চলা ঠিকও নয়। কোটা–সুবিধা নিয়ে যেসব অনগ্রসর মানুষ এগিয়ে গেছেন, তাঁদের সেই সুযোগ গ্রহণ বন্ধ করা দরকার, যাতে প্রকৃত প্রয়োজন যাঁদের, তাঁরা উপকৃত হতে পারেন। কীভাবে তা নির্ধারণ করা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন তিনি।
গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটের আগে এই রায় নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষে খুশির কারণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।