মানুষের কাছ থেকে কিছু নিয়ে থাকলে তা ফেরত দিন, কর্মীদের বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি। দলের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সেই কাণ্ডে ধরা পড়লেন। তার পর থেকে পার্থ কারাগারে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিকটজনদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হলো। পার্থর পর গরু পাচার মামলায় ধরা পড়লেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তিনিও এখন কারাগারে। এসব কাণ্ড যেতে না যেতেই ‘আবাস যোজনা’ বা দরিদ্রদের বাড়ি দেওয়ার ঘটনায় বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। একের পর এক এসব দুর্নীতির ঘটনার পর এখন কর্মীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বান, ‘মানুষের কাছে থেকে কিছু নিয়ে থাকলে ফেরত দিন।’
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং রাজ্যের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি শুরু হয়েছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি’র বাস্তবায়ন। এরই আওতায় গত শুক্রবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু শুরু করেছেন ‘দিদির দূত’ পাঠানো কর্মসূচি। আর এতে যোগ দিচ্ছেন মমতার নিয়োজিত রাজ্যের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ তৃণমূল নেতারা। এই দূতেরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের কথা শোনার কথা। তবে গ্রামে গিয়ে মমতার দূতেরা বিক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক এলাকায় মমতার এসব দূতকে ঢুকতেও দেননি এলাকাবাসী।
রাজ্যের তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির কাণ্ডকে মানুষ যে মেনে নিতে পারেনি রাজ্যবাসী, এসব ঘটনা তারই প্রমাণ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষের মনের অবস্থা বুঝে গতকাল সোমবারই মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে হঠাৎ সুর বদল করে বলেছেন, ‘দু–একজন খারাপ থাকতে পারে; সবাই খারাপ নন। আপনারা মানুষের কাছে যান। কিছু নিয়ে থাকলে তা তাঁকে ফেরত দিন। তাঁর কাছে ক্ষমা চান। মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলে মানুষ ক্ষমা করেন।’
মমতার ক্ষমা চাওয়ার এই বার্তা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি নেতা ও রাজ্যের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য গতকালই বলেছেন, ‘আর কত ক্ষমা চাইবেন? মানুষ তো ১১ বছর ধরে ক্ষমা করে আসছে। আর কত দিন?’
বিরোধীরা বলছেন, তবে তো মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেই নিলেন রাজ্যব্যাপী দলের নেতাদের দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘দূতদের’ প্রতি জনরোষ অব্যাহত আছে। গতকালই বীরভূম জেলার নানুরের তৃণমূল বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি দিদির দূত হয়ে এলাকায় গেলে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় বিধায়কের সঙ্গী এক তৃণমূল নেতা তো এলাকার অজয় নদের বাঁধের বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেই ফেলেন, ‘এখন বাঁধ না থাকলেও বালু থাকলে চলবে। তাতেই পার্টি চলবে।’