সামরিক জোট নিয়ে কি আলোচনা হলো অস্টিন-রাজনাথের

দিল্লিতে আজ ৫ জুন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়
ছবি: এএনআই

প্রতিরক্ষা শিল্পোৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে অগ্রসর হওয়ার এক দিকনির্দেশিকা স্থির করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন লয়েডের দুদিনের ভারত সফরে আজ সোমবার এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। আমরা এখন প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের দিকে নজর দিচ্ছি।’

প্রতিরক্ষা শিল্পোৎপাদনে এ সহযোগিতার মূল লক্ষ্য ভারতকে ‘আত্মনির্ভর’ করে তোলা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান বাস্তবায়িত করা। দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ‘উষ্ণ ও আন্তরিক’ বৈঠকের পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী কয়েক বছর এ লক্ষ্যে দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র কীভাবে বিস্তৃত করবে, তার নীতিনির্ধারণী দিকনির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী দুই দেশ নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করবে। উৎপাদনের ব্যাপ্তি ঘটাতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপরও জোর দেওয়া হবে।

দুই নেতা প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত যোগাযোগ আরও বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন। বৈঠকের পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত, অবাধ ও আইনি শাসনের আওতায় রাখা এবং তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের সম্পর্ক গভীরতর হওয়া জরুরি। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াতে ভারত আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।

সফরের আগে ওয়াকিবহাল মহলের খবর ছিল, ভারতকে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক আগ্রহী। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে ৩০টি ‘এমকিউ-৯বি’ সশস্ত্র ড্রোন কেনার বিষয়েও ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। অস্টিনের সফরে এসব বিষয় বিবেচিত হবে। দুই মন্ত্রীর বৈঠকের পর অবশ্য এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। যদিও মনে করা হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ সফর অত্যন্ত ইঙ্গিতবাহী।
ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরসম্ভারের সিংহভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া। দীর্ঘদিনের সেই সম্পর্ক সত্ত্বেও কিছু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েল থেকেও ভারত সামরিক অস্ত্র কেনা শুরু করেছে।

অস্টিন ভারতে আসার আগে সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তাসংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন ‘সাংগ্রি লা ডায়ালগ’-এ অংশ নেন। সেখানে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘ন্যাটো’র মতো কোনো সামরিক জোট গঠন গোটা তল্লাটকে বিবাদের ঘূর্ণাবর্তে নিমজ্জিত করবে। চীনের অনুমান, তাদের রুখতে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর মতো এক সামরিক জোট তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। সেই জোটে তারা ভারতকে শামিল করতে আগ্রহী।

অস্টিনের সঙ্গে রাজনাথ সিংয়ের বৈঠকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ‘ভয়মুক্ত ও অবাধ’ রাখা নিয়ে আলোচনা হলেও ন্যাটোর মতো সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো মহল থেকে কিছু বলা হয়নি। লয়েড অস্টিন আজ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেন।