সহকর্মীকে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে ধর্মঘটের ডাক চিকিৎসকদের

কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ভারতের আহমেদাবাদের একটি মেডিকেল কলেজে। ১৬ আগস্ট ২০২৪ছবি: রয়টার্স

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ভারতের চিকিৎসকেরা আজ শুক্রবারও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট পালন করেছেন। বিক্ষোভ থেকে আজ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। এ পরিস্থিতিতে আগামীকাল শনিবার ভারতজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশটির চিকিৎসকদের সংগঠন দ্য ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। সংগঠনটির ১০ লাখের বেশি সদস্য রয়েছে।

আইএমএর প্রেসিডেন্ট আর ভি অশোকান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই দেশে (ভারতে) আমাদের পেশার বড় অংশই নারী। আমরা আবারও তাঁদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।’

শনিবার সকাল থেকে ভারতজুড়ে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন আইএমএর চিকিৎসকেরা। এ সময় জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে।

গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) উত্তর কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ পাওয়া যায়। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা শেষে ওই দিন রাতে তিনি সেখানে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন।

৩১ বছর বয়সী ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের মরদেহটি ছিল রক্তাক্ত, শরীরের নানা জায়গায় জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলছে, ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কলকাতার পাশাপাশি সারা ভারতের চিকিৎসকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। চিকিৎসকদের পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিক, অভিনয়শিল্পী ও নানা মাধ্যমের সংস্কৃতিকর্মীরাও বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন।

রাজধানী নয়াদিল্লির রাষ্ট্র পরিচালিত অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এআইআইএমএস) চিকিৎসক শুভ্রঙ্কর দত্ত বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীর ন্যায়বিচারের দাবিতে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলছি।’

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার পরিচালিত আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে গত সোমবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলো ‘অনির্দিষ্টকালের’ জন্য কিছু সেবা স্থগিত রেখেছে। ভারতজুড়ে অনেকগুলো সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল সংগঠন নানা মাত্রায় ধর্মঘট পালন করেছে।

বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে কলকাতার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। মোমবাতি জ্বেলে, স্লোগানে-গানে তাঁরা চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ জানান। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ‘রাতের দখল নাও’ ব্যানারে ওই বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। অধিকাংশ জায়গায় নারীরাই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। ঘটনাক্রমে এদিন ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস।

নৃশংসতা

ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসকের মা-বাবা আদালতে একটি আবেদন করেছেন। এতে বলা হয়, তাঁদের ধারণা, তাঁদের মেয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় আর জি কর হাসপাতালের এক পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। আটক পুলিশ সদস্য হাসপাতালে রোগীদের সারি ঠিক রাখার কাজ করতেন।

উল্লেখ্য, ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি বড় সমস্যা। ১৪০ কোটির মানুষের দেশটিতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে।

কলকাতায় নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনা দিল্লির ২০১২ সালের ভয়ংকর দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তখন একটি গাড়িতে ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল।

ভয়াবহ এ ঘটনার পর ওই নারী ভারতে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। এ ঘটনার পর দিল্লিসহ ভারতের নানা জায়গায় অনেক দিন ধরে বিক্ষোভ হয়েছিল। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল।

এ ঘটনায় চাপে পড়ে তৎকালীন সরকার ধর্ষকদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করে নতুন আইন করেছিল। একই ধর্ষক পুনরায় ধর্ষণ করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

তা ছাড়া নতুন কিছু অপরাধকে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব অপরাধের মধ্যে কোনো নারীকে গোপনে অনুসরণ করা, কোনো ধর্ষণের অভিযোগের মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি। এসব ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর জি করের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা স্বাস্থ্যকর্মীদের সহিংসতা থেকে রক্ষায় ‘কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন’ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।