গুজরাটে ‘দেশদ্রোহীদের’ জন্য হবে বিশেষ সেল

অমিত শাহ
ছবি : এএনআই

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুজরাটের মুসলমানদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরদিন বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হলো, এবার ক্ষমতায় এলে তারা রাজ্যে ‘মৌলবাদবিরোধী সেল’ গড়ে তুলবে। সেই সেলের কাজ হবে দেশবিরোধী শক্তি, মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করা ও দেশের সুস্থিতি নষ্ট করার পথে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিনষ্ট করা।

গতকাল শনিবার গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরে দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করে এই সংকল্পের কথা জানিয়ে বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেন, দেশবিরোধী যত শক্তি রয়েছে, যত মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন রয়েছে, তাদের ‘স্লিপার সেলের’ লোকজনকে খুঁজে বের করা হবে। স্থিতিশীলতার পক্ষে যা কিছু বিপজ্জনক, তা হিসাব করা হবে। ‘মৌলবাদবিরোধী সেল’ এই কাজ নিশ্চিত করবে।

একই সঙ্গে বিজেপির সভাপতি জানান, ক্ষমতায় এলে তাঁরা গোটা রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পূর্ণভাবে চালু করবেন। সেই সঙ্গে ২০ লাখ গুজরাটির কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করবেন।

বিজেপির সভাপতি রাজ্যে যে মৌলবাদবিরোধী সেল গড়ার প্রতিশ্রুতি শোনালেন, এক দিন আগে অমিত শাহর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল তেমনই এক হুংকার। এক নির্বাচনী জনসভায় শুক্রবার শাহ বলেন, ২০০২ সালে গুজরাটে ‘ওদের’ (নাম না করে মুসলমানদের) উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তাই দুই দশক ধরে রাজ্যে চিরস্থায়ী শান্তি বিরাজ করছে। রাজ্যের খেরা জেলায় এক জনসভায় এই ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার কথা শোনানোর মধ্য দিয়ে তিনি কংগ্রেসকে একহাত নিয়ে বলেন, আগে কংগ্রেস আমলে রাজ্যে দাঙ্গা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কংগ্রেস ভোট ব্যাংকের স্বার্থে ওই কাজ করত। ২০০২ সালে ‘ওদের’ উচিত শিক্ষা দেওয়ার পর থেকে রাজ্যে পাকাপাকি শান্তি এসেছে। অপরাধীরা হিংসার পথ থেকে সরে গেছে। কারণ, তারা বুঝেছে, অশান্তি করলে বিজেপি কড়া ব্যবস্থা নেবে।

অমিত শাহ ‘ওরা’ বলতে কাদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি। ‘উচিত শিক্ষা’ই বা কী, তা-ও ব্যাখ্যা করেননি। যদিও মনে করা হচ্ছে, তিনি গুজরাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০২ সালের ভয়ংকর দাঙ্গার উল্লেখ করেছেন, যাতে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৪ জন নিহত, ২ হাজার ৫০০ জন গুরুতর আহত ও ২২৫ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন। বেসরকারি হিসাবে যদিও নিহতের সংখ্যা ছিল ২ হাজারের বেশি। সরকারিভাবে নিহতদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ৭৯০, হিন্দু ২৫৪ জন।

গুজরাটে ক্ষমতা কায়েম রাখতে শাসক বিজেপি কতটা মরিয়া, শাহর ভাষণ ও নাড্ডার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তার প্রমাণ। বিরোধীদের মতে, এ ধরনের মন্তব্য ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে বিজেপি সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণের তীব্র সমালোচনা করে জানতে চেয়েছেন, ‘উচিত শিক্ষার প্রসঙ্গে উনি কী বোঝাতে চান? কোন শিক্ষার কথা উনি বলছেন? নারোদা পাটিয়ার শিক্ষা? গুলবর্গা সোসাইটির শিক্ষা?’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ওয়েইসি বলেন, ‘আপনার শিক্ষা হলো বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া। তাঁর তিন বছরের সন্তানের খুনিদের মুক্তি দেওয়া।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি যে চিরকাল কেউ ক্ষমতায় থাকেন না। তৃণমূলের সংসদ সদ্য মহুয়া মৈত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য লিখে টুইট করে বলেন, ‘এই হলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ এরপর শেক্‌সপিয়ারের ম্যাকবেথ নাটক থেকে লেডি ম্যাকবেথের বিখ্যাত খেদোক্তির (হিয়ার হিজ দ্য স্মেল অব দ্য ব্লাড স্টিল; অল দ্য পারফিউমস অব অ্যারাবিয়া উইল নট সুইটেন দিস লিটল হ্যান্ড) উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আরব দেশের সব সুগন্ধিও তাঁর হাতকে মধুর করতে পারবে না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একই ধরনের সমালোচনা করেছেন উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও। টুইট করে তিনি জানতে চেয়েছেন, ‘বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তিদান কি আপনাদের শিক্ষাদানের একটা অঙ্গ?’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিও এমন ধরনের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য অতীব নিন্দনীয়। সরকারের কাজ হলো সংবিধান রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। গণহত্যার প্রচারের মাধ্যমে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়া নয়। কংগ্রেস অবশ্য গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনবিধি ভঙ্গের অভিযোগও দাখিল করেনি।

আরও পড়ুন