আরএসএসের সঙ্গে নেতাজির আদর্শের সম্পর্ক নেই: নেতাজি–কন্যা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।

ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আজ সোমবার বড় করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করছে। এর আগে সুভাষচন্দ্র বসুর মেয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁর বাবার সঙ্গে আরএসএসের আদর্শের কোনো সম্পর্ক ছিল না।  

আরএসএস আজ নেতাজির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে। এ উপলক্ষে প্রায় সাত দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন আরএসএসের প্রধান মোহন ভাগবত। আজ মধ্য কলকাতার শহীদ মিনারে নেতাজিকে নিয়ে আরএসএসের যে অনুষ্ঠান হবে, তাতে প্রধান বক্তা ভাগবত।

সে অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে নেতাজির মেয়ে অনিতা বসু পাফ জার্মানি থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। সেই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ধর্মপ্রাণ হিন্দু ছিলেন, কিন্তু সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি মনে করতেন, সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকা উচিত। আমি মনে করি না যে আরএসএস এ কথা মনে করে।’

ভারতে ২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি স্তরে নেতাজিকে নিয়ে প্রচুর অনুষ্ঠান হচ্ছে। বিজেপি সরকার সরাসরি এসব অনুষ্ঠানের পাশে দাঁড়াচ্ছে, নানাভাবে সমর্থন দিচ্ছে।

এর কারণ, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মূল স্রোত (যে স্রোতের নেতৃত্বে ছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু), তার সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর মতবিরোধ সুবিদিত। এ নিয়ে প্রচুর বই ও প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। সে কারণেই প্রায় ১০ বছর ধরে নেতাজিকে তাদের চিন্তাভাবনায় বিশ্বাসী এক জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছে হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী সংগঠন।

সে প্রচেষ্টারই বিরোধিতা করেছেন অনিতা পাফ। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নেতাজির আদর্শকে আরএসএস তাদের আদর্শ করে নিতে পারলে তাতে ভারতের ভালো হবে।
অনিতা পাফ বলেন, ‘নেতাজি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতেন। আমি মনে করি না এর সঙ্গে আরএসএসের সম্পর্ক আছে। আরএসএস যদি হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শ এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তবে তা কখনোই নেতাজির আদর্শের সঙ্গে মিলবে না। এটা যদি তারা করে, তবে তা আমি কখনোই মানতে পারব না।’ অনিতাকে আজকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়নি আরএসএস।

অনিতা পাফ অতীতেও এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তবে বিবৃতি দিয়ে এত জোরালোভাবে করেননি। সার্বিকভাবে অবশ্য কয়েকজনকে বাদ দিয়ে নেতাজির পরিবারের প্রায় সবাই আরএসএসের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শকে এড়িয়ে চলেন। তাঁরা প্রকাশ্যে বলেন যে এর সঙ্গে নেতাজির আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই।

যেমন নেতাজির ভাইয়ের দুই পৌত্র ইতিহাসবিদ সুগত বসু এবং তাঁর ভাই আরেক ইতিহাসবিদ সুমন্ত বসু বরাবরই বিজেপি ও আরএসএসের ভাবধারার সমালোচনা করেছেন। দুই বছর আগে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কলকাতায় নেতাজি ভবনে এসেছিলেন, তখন ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা সুগত বসু এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, তাঁদের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।