পিৎজা খাওয়ানোর চুক্তিতে বিয়ে
সাধারণত বিয়ের সময় বর ও কনেপক্ষের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়, তা মূলত বেশ গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে। কিন্তু ভারতীয় এক নবদম্পতি সম্প্রতি তাঁদের বিয়েতে যে চুক্তিতে সই করেন, স্বাভাবিক চুক্তির মতো না হওয়ায় সেই চুক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, হয়েছে সংবাদের শিরোনাম। খবর বিবিসির।
বিয়ের পর কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না—এমন একটি মজার তালিকায় সই করেছেন ওই নবদম্পতি। এই তালিকা তৈরিতে সাহায্য করেছেন বর ও কনের বন্ধুরা। সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে যে চুক্তি হয় উভয় পক্ষই তা মানতে আইনত বাধ্য থাকে। তবে এই নবদম্পতির করণীয় নিয়ে চুক্তির ক্ষেত্রে সেই বাধ্যবাধকতা নেই।
গত ২১ জুন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরদিন চুক্তির এই ভিডিও চিত্র ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়। অভিনব চুক্তিতে নবদম্পতির সই করার ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্র অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই সাড়া ফেলে। এর পর থেকে সাড়ে চার কোটি মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন, মন্তব্য করেছেন অনেকেই।
বিয়েতে বন্ধুদের নিয়ে এমন চুক্তির ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। অতীতে এমন আরও উদাহরণ আছে, যেখানে একজন বর বা কনে বা তাঁদের বন্ধুরা এ ধরনের চুক্তি করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ভিডিওটি চুক্তির তালিকায় থাকা প্রথম বিষয়টির জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রথম দফাটি হলো ‘প্রতি মাসে শুধু একটি পিৎজা।’
বিয়ের সময় চুক্তি করে মাসে একটি পিৎজা খাওয়ার প্রতিশ্রুতি চাওয়া কনের নাম শান্তি প্রসাদ। তাঁর বয়স ২৪ বছর। শান্তির বন্ধুরা তাঁকে ‘একজন পিৎজাপ্রেমী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। কলেজে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো মিন্টু রায়ের (২৫) সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের গোহাটিতে প্রথা মেনেই তাঁদের বিয়ে হয়েছে।
এই নবদম্পতি একই কলেজের বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন। পাঁচ বছর আগে প্রথম তাঁদের দেখা হয়। এরপরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কিছুদিন পরই হোয়াটসঅ্যাপে তাঁদের আলাপ শুরু হয়। একদিন শান্তি কলেজে যেতে পারে না এবং মিন্টুকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে বলে। মিন্টু তো সাহায্যের জন্য প্রস্তুত ছিল।
পরে তাঁরা কথা বলতে শুরু করেন। সময় যত গড়ায় একে অপরের প্রতি আকর্ষণ তত বাড়ে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রণয়ে রূপ নেয়।
আসামের রাজধানী শহর গোহাটিতে মিন্টু রায়ের ইলেকট্রিক পণ্যের একটি দোকান আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কলেজে থাকার সময় শেষ ক্লাসটি ফাঁকি দিয়ে কাছের পিৎজার দোকানে যেতাম। আমি এটা জানতাম যে তাঁকে আমার পিৎজার দোকানে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সব সময় পিৎজা সম্পর্কে নানা কথা বলত।’
শান্তি বলেন, ‘পিৎজা আমার খুবই পছন্দ। তার সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলেই আমি সব সময় বলতাম, চলো কোথাও গিয়ে পিৎজা খেয়ে আসি।’ কিন্তু কিছুদিন পর মিন্টু অভিযোগ জানাতে শুরু করে। পিৎজা পছন্দ হলেও প্রতিদিন তা খেতে চাইত না। শান্তির কথায় মিন্টু বলতেন, ‘আর কত পিৎজা, এবার চলো অন্য কিছু খাই।’
ওই নবদম্পতি বলছেন, খাবার নিয়ে তাঁরা কখনো ঝগড়া করতেন না। মিন্টু বলছেন, অন্তত এখন পর্যন্ত এ নিয়ে ঝগড়া হয়নি। কিন্তু শান্তি বলেন, তিনি সব সময়ই তাঁর বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করতেন। তিনি আরও বলতেন, প্রতিদিন পিৎজা খেতে খেতে তিনি কতটা বিরক্ত। এ ছাড়া তাদের এই বিষয় নিয়ে মিন্টুর বন্ধুরা হাসাহাসি করতেন।
শান্তি ও মিন্টুর বন্ধু ও সহপাঠী রাঘব ঠাকুর। বিয়েতে যে অভিনব এই চুক্তি হয়েছে এর পেছনে তাঁরও হাত আছে। রাঘব বিবিসিকে বলেছেন, ‘মিন্টুর পরই শান্তির দ্বিতীয় ভালোবাসা পিৎজা। আমার মনে হয়, শান্তি শুধু তার অবসর সময়েই পিৎজা নিয়ে ভাবে না, এমনকি ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নে সে পিৎজা দেখে আর পিৎজা খায়।’
বিয়ের আগের সপ্তাহে এই চুক্তির খসড়া করা হয়। সেখানে পিৎজা খাওয়া ছাড়াও আরও কিছু বিষয় ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি শর্ত হলো, প্রতি রোববার মিন্টুকে সকালের নাশতা বানাতে হবে, ১৫ দিন অন্তর শান্তিকে কেনাকাটা করতে নিয়ে যেতে হবে এবং শুধু শান্তিকে নিয়েই মধ্যরাতের কোনো পার্টিতে যেতে পারবে মিন্টু। এ ছাড়া পিৎজা অক্ষত হতে হবে, শান্তিকে প্রতিদিন ব্যায়ামাগারে যেতে হবে ও শাড়ি পরতে হবে। কারণ মিন্টুর মতে, ‘শাড়ি পরলে শান্তিকে অনেক সুন্দর দেখায়।’