কে হবেন কর্ণাটকের কান্ডারি

তিনজনই কর্ণাটক রাজ্যের। (বাঁ থেকে) সিদ্দারামাইয়া, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও ডি কে শিবকুমার। বিজয়ের পর খাড়গেকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অন্য দুই নেতাছবি: এএনআই

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেবেন আগামী বৃহস্পতিবার। কিন্তু কে হবেন রাজ্যের কান্ডারি, সেই রহস্য গতকাল রোববারও দূর হলো না।

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করতে নির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠক হয়। বিধায়কদের মন বুঝতে বেঙ্গালুরুর সাংগ্রিলা হোটেলে ওই বৈঠক ডাকা হয়। এআইসিসি সেই দায়িত্ব দিয়েছে মহারাষ্ট্রের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার শিন্ডে, রাজস্থানের নেতা জিতেন্দ্র সিং আলওয়ার ও একসময় মধ্যপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দীপক বাবারিয়াকে।

এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বৈঠকে বিধায়কেরা সেই দায়িত্ব কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গতকাল সন্ধ্যায় কংগ্রেসের এই বৈঠক শুরুর আগেই দলীয় সূত্রে সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, বৃহস্পতিবার নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ হবে। সেই অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উপস্থিত থাকবেন।

মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার দুজন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে ‘সমভাবাপন্ন’ সব দলের নেতাদের। বিজেপিবিরোধী জোট গড়ে তুলতে কংগ্রেস যে সচেষ্ট ও তৎপর, সমভাবাপন্ন দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে সেই বার্তা দেওয়া হবে। কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।

২২৪ সদস্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস জিতেছে ১৩৫ আসন। বিজেপি পেয়েছে ৬৬ ও জেডিএস ১৯টি। চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর অন্যতম ললিতা মল্লিকার্জুন গতকাল কংগ্রেসকে শর্তহীন সমর্থনের কথা চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় দল সর্বোদয় কর্ণাটক পার্টি একটি আসনে জয়ী হয়েছে। এই দলের প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেস-সমর্থিত।

মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার দুজন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার। ৭৬ বছরের সিদ্দারামাইয়া ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। অনগ্রসর কুড়ুবা সম্প্রদায়ের এই জনপ্রিয় নেতার প্রতি দলিত, তফসিল জাতি, উপজাতি ও মুসলমানদের সমর্থন কংগ্রেসের প্রধান শক্তি। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে গৃহীত তাঁর বিভিন্ন প্রকল্প জনপ্রিয় হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা, প্রশাসনিক দিক থেকে দক্ষ সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

এই দুজনের বিবাদের মধ্যে না গিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড মল্লিকার্জুন খাড়গেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবে কি না, সেই জল্পনাও চলছে। যদিও এআইসিসি নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেছেন, ওই জল্পনা ভিত্তিহীন।

শিবকুমারের শক্তি তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা। রাজ্যের সব জেলায় সব মহলে সংগঠনকে তিনি জোরদার করে তুলেছেন। সিদ্দারামাইয়ার মতো প্রথমে জনতা দল ও তারপর জেডিএস হয়ে তিনি কংগ্রেসে আসেননি। শিবকুমার বরাবরের কংগ্রেসি। দলের সংকটে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই ভোক্কালিগা নেতাকে দলে টানার প্রবল চেষ্টা করেছিল বিজেপি। সফল হয়নি। তারপর তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে দিল্লির তিহার জেলে রেখেছিল। সোনিয়া গান্ধী সেখানে গিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। শিবকুমার গান্ধী পরিবারের স্নেহধন্য।

গত শনিবার থেকেই দুই নেতার সমর্থকেরা মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে সরব। সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার দুজনের বাড়িতেই সমর্থকেরা পোস্টার লাগিয়ে রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁদের আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন। দুজনের সমর্থকেরাই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগান চলে বিধায়কদের বৈঠক শুরুর আগেও। সিদ্দারামাইয়ার ছেলে শনিবারই বলেছেন, রাজ্যের স্বার্থে তাঁর বাবাকেই মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত।

আজ সোমবার শিবকুমারের জন্মদিন। সেই উপলক্ষেও আগাম অভিনন্দন জানিয়ে সমর্থকেরা তাঁর নামে পোস্টার সেঁটেছেন। তাতেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিবকুমার গতকাল মন্দিরে গিয়েছিলেন প্রার্থনা জানাতে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। দুজনে হাতে হাতে মিলিয়ে কাজ করেছেন। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, দলের জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছেন।

এই দুজনের বিবাদের মধ্যে না গিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড মল্লিকার্জুন খাড়গেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবে কি না, সেই জল্পনাও চলছে। যদিও এআইসিসি নেতা কে সি বেনুগোপাল বলেছেন, ওই জল্পনা ভিত্তিহীন। এই জল্পনাও চলছে, দুই নেতাকে খুশি রাখতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করা হতে পারে। ৭৬ বছরের সিদ্দারামাইয়া আগেই জানিয়েছেন, তিনি আর ভোটে দাঁড়াবেন না।