নীতীশ-নাইডুর হাতে এখন বিজেপির বাঁচা-মরা
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ বেলা তিনটা পর্যন্ত ফলাফলের যে চিত্র, তাতে দুটি কথা সম্ভবত বলা যায়। এক, এবারও নির্বাচনে জিততে চলেছে বিজেপি এবং দুই, গত দুবারের মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা সম্ভবত পাবে না।
নির্বাচনের ভোট গণনা এখনো শেষ হয়নি। সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, এই চিত্র স্থায়ী হবে কি না। তবে অর্ধেক বা তার বেশি ভোট গণনা হয়ে যাওয়ার পর মনে করা হচ্ছে যে বিজেপি জিতবে এবং পরবর্তী সরকার তাদের শরিকদের নিয়েই চালাতে হবে।
অর্ধেক ভোট গণনা শেষে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৪১ আসনে, আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ৯৯ আসনে। গত নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭২ আসন। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে ৩১ আসনে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি।
এনডিএ জোটের শরিকদের প্রধান অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম, যারা এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ১৬ আসনে এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ)। নীতীশ কুমার এ পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন ১৪ আসনে।
এই দুই দল ছাড়া আরও একাধিক এনডিএ শরিকের ওপরে নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। এদের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী, যারা এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ৬ আসনে, বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি এগিয়ে রয়েছে ৫ আসনে এবং উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল এগিয়ে রয়েছে তিন আসনে। তবে শুধু এসব দলই নয়, আরও বেশ কিছু দল রয়েছে, যাদের কেউ দুই বা এক আসনে সারা ভারতে এগিয়ে রয়েছে। এদেরও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে ভবিষ্যতের বিজেপিকে।
সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে বিজেপিকে। এ ধরনের সমস্যায় তারা গত দুবার পড়েনি। এর ফলে ভারতের রাজনীতির একটা নতুন অধ্যায় সূচিত হবে বলেও মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইনস্টিটিউটের মুখ্য জাতীয় গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, শরিক দলগুলোকে নিয়ে পরবর্তী সরকার চালানো এনডিএ জোটের জন্য একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হবে।
সাবির আহমেদ বলেন, এত দিন বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। অবশ্যই এনডিএ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল না। সব সময় বিজেপির সিদ্ধান্ত বা নীতি অগ্রাধিকার পেত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিলকে আইনে পরিণত করার প্রশ্নে। এবারে কিন্তু তাদের শরিকদের কথা শুনতে হবে এবং এটা নিয়ে মোদি-শাহের সরকার বেশ খানিকটা চাপে থাকবেন। বিশেষত যখন বিরোধীদের শক্তি অনেকটাই বাড়ল।
১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট একাধিক শরিক নিয়ে পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছিল। তাঁর অসুবিধা হলেও অটল বিহারী বারবারই বলতেন, ইন্দিরা গান্ধী ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করে জোট ঘরানার রাজনীতিতে তিনি অভ্যস্ত ও স্বচ্ছন্দ।
কিন্তু এখনকার বিজেপি তা নয়। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এককভাবে বারবার জিততেই অভ্যস্ত। শরিকদের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের ভরসায় রাজ্য বা কেন্দ্র কোথাও সরকার চালাননি নরেন্দ্র মোদি। এই নতুন সমীকরণের সঙ্গে তিনি কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, কীভাবে ওঠাবসা করছেন সেই সব বন্ধুর সঙ্গে, যাদের ওপর আগামী দিনে তাঁর সরকারের বাঁচা–মরা নির্ভর করবে।
ভারতের ভবিষ্যতের রাজনীতিতে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে চলেছে, যেমনটা হয়েছিল ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের জোট সরকার চালানোর ক্ষেত্রে।
বিষয়টি মাথায় রেখেই নরেন্দ্র মোদির দপ্তর আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে ৯ জুন যখন চন্দ্রবাবু নাইডুর নতুন সরকার অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় শপথ নেবে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। লোকসভার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনও হয়েছিল।
এর কারণ, কেন্দ্রে চন্দ্রবাবু বা নীতিশ কুমারের মতো শরিকদের ওপরে যে বিজেপি তথা এনডিএর বাঁচা-মরা নির্ভর করবে আগামী দিনে।