ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রত্যাশামতোই উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি আসন ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। ছেড়ে দিচ্ছেন কেরালার ওয়েনাড আসন। সেখান থেকে লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন রাহুলের বোনা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নয়াদিল্লির বাসভবনে আজ সোমবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর রাহুল নিজেই সংবাদমাধ্যমকে এই খবর দিয়ে বলেন, ‘খুবই কঠিন ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। ওয়েনাডের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলকে সহায়তা করেছেন। কিন্তু একটা আসন ছাড়তেই হবে। সবদিক বিবেচনা করে দল ওয়েনাড ছাড়ার পক্ষে মত দিয়েছে। ঠিক হয়েছে, সেখান থেকে উপনির্বাচনে নির্বাচন করবেন প্রিয়াঙ্কা।’
রাহুলের পাশাপাশি খাড়গেও একই কথা সাংবাদিকদের জানান। কংগ্রেস সভাপতির বাসভবনে ওই বৈঠক বসে আজ বিকেল পাঁচটায়। খাড়গে ও রাহুলের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও কে সি বেনুগোপাল। নিয়ম অনুযায়ী ভোটের ফল প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। আগামীকাল মঙ্গলবার সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
দলীয় সভাপতির বাসভবনে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রিয়াঙ্কা জানান, তিনি নার্ভাস নন। বরং প্রস্তুত। ওয়েনাডের জন্য তিনি তাঁর সেরাটা দেবেন।
বোনকে পাশে নিয়ে রাহুল জানান, ওয়েনাড ছাড়লেও তিনি সেখানে নিয়মিতভাবে যাবেন। ওয়েনাডের জন্য যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা যাতে পূরণ হয় সেটাও দেখবেন। তিনি বলেন, ‘একটা কঠিন সময় ওয়েনাডের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই কেন্দ্রের সঙ্গে আমার একটা আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাই সহজ ছিল না।’ রাহুল বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা ওয়েনাড থেকে ঠিকই জিতবেন। তিনি একজন উপযুক্ত জনপ্রতিনিধি হবেন। ওয়েনাডের জনগণ বরং খুশি হবেন এটা দেখে যে তাঁরা একজনের বদলে দুজনকে তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে পাবেন। প্রিয়াঙ্কা ও আমি। ওয়েনাডের জনতার জন্য আমার দরজা চিরকাল খোলা থাকবে।’
ওয়েনাড থেকে প্রিয়াঙ্কার নাম এখনই ঘোষণার কোনো বাধ্যবাধকতা অবশ্য ছিল না। কারণ, নির্বাচন কমিশন ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঘোষণাই করেনি। কিন্তু কংগ্রেস সে জন্য অপেক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে ঠিক হয়, দলের স্বার্থ ও ওয়েনাডের জনগণের জন্য প্রিয়াঙ্কার নাম এখনই জানিয়ে দেওয়া দরকার যাতে ওই কেন্দ্রে বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া না হয়। ওয়েনাডের কংগ্রেস মহলও দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাহুল একান্তই যদি রায়বেরিলি ধরে রাখেন তা হলে যেন প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করা হয়।
প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রে এটাই হবে প্রথম নির্বাচন। তা–ও দক্ষিণের কোনো রাজ্য থেকে। গান্ধী পরিবারের কেউ কখনো প্রথমবার ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে দাক্ষিণাত্যকে বেছে নেননি। প্রিয়াঙ্কা সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে চলেছেন।
স্বাস্থ্যের কারণে সোনিয়া গান্ধী রায়বেরিলি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লোকসভা ছেড়ে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। সেই থেকে জল্পনা চলছিল প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব শেষ সময়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমেথি আসন থেকে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কিশোরীলাল শর্মা প্রার্থী হবেন এবং রাহুল দ্বিতীয় আসন হিসেবে দাঁড়াবেন রায়বেরিলি থেকে। সেই সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল ভোটের ফলই তার প্রমাণ। কিশোরীলাল দেড় লাখের বেশি ব্যবধানে হারান বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে, রাহুলও রায়বেরিলি থেকে জিতেছেন বিপুল ব্যবধানে।
তখন থেকেই শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক জল্পনা রাহুল কোন আসন রেখে কোনটা ছাড়বেন। সব দিক খতিয়ে দেখে ঠিক হয়, উত্তর প্রদেশে দলকে শক্তিশালী করে তুলতে হলে রায়বেরিলিতে রাহুলের উপস্থিতি বেশি প্রয়োজন। কিন্তু তা করতে গিয়ে ওয়েনাড তথা কেরালার মানুষকে কষ্ট দেওয়া উচিত হবে না। সেই কারণে প্রিয়াঙ্কাকে নির্বাচনে নামানোর সিদ্ধান্ত।
প্রিয়াঙ্কা নিজেও আগ্রহী। এই নির্বাচনে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস প্রার্থীদের হয়ে প্রচার চালিয়েছেন। রায়বেরিলি ও আমেথির ভোটের দায়িত্বও তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। ওই দুই কেন্দ্রের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে রাহুল একথাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রিয়াঙ্কা যাতে বারানসিতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়েন সে নিয়ে দলে আলোচনা হয়েছিল। জনসভায় রাহুল বলেছিলেন, প্রিয়াঙ্কা দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনি ২–৩ লাখ ভোটে জিততেন।
সোমবারের বৈঠকে অবশ্য ঠিক হয়নি রাহুল দলের দাবি মেনে লোকসভার বিরোধী নেতার পদ গ্রহণ করবেন কি না। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল ওই দায়িত্ব নিতে এখনো রাজি নন। একান্তই তিনি রাজি না হলে কাকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনটি নাম বিবেচিত হচ্ছে। হরিয়ানার নেত্রী কুমারী শৈলজা, আসামের নেতা গৌরব গগৈ এবং চন্ডীগড় থেকে জেতা মণীশ তিওয়ারি।
লোকসভার বিরোধী নেতা ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদা পান। বিরোধী নেতা হতে গেলে লোকসভার মোট আসনের এক দশমাংশ আসন, অর্থাৎ ৫৫টি, পেতে হয়। গত দুই বার কংগ্রেস তা পায়নি। তা সত্ত্বেও গতবার কংগ্রেস নেতা অধীর চোধুরীকে সেই সম্মান দেওয়া হয়েছিল। সেটা ছিল বিজেপির বদান্যতা। নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন সাংবিধানিক পদাধিকারীর মনোনয়নে বিরোধী নেতার মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক।