কংগ্রেস সংস্কারের পথে হাঁটল না, ভোটের বদলে মনোনয়ন
দাবি ছিল জোরালো, তিন বছর ধরে ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীভুক্ত নেতারা সেই দাবিতেই সরব, কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘সব দিক খতিয়ে দেখে’ সংস্কারের পথে হাঁটল না কংগ্রেস। গতকাল শুক্রবার ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে কংগ্রেসের ৮৫তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের প্রথম দিনে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর ঠিক হয়েছে—নতুন ওয়ার্কিং কমিটির গঠন নির্বাচনের মাধ্যমে হবে না। নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেই সদস্যদের মনোনীত করবেন।
এ ছাড়া পুরোনো ওয়ার্কিং কমিটির বদলে গঠিত অস্থায়ী স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের আলোচনায় ঠিক হয়েছে—নতুন ওয়ার্কিং কমিটির অর্ধেক পদে আনা হবে দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর, সংখ্যালঘু, মহিলা ও ৫০ বছরের কম বয়সী তরুণ প্রজন্মের নেতাদের। সে জন্য দলীয় সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।
অস্থায়ী স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হলেও সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গত শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে শীর্ষ নেতারা জানিয়েছিলেন, গান্ধী পরিবার সভাপতিকে নিয়ন্ত্রণ করে না, সব বিষয়ে তাঁকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া হয়, এই বার্তা দিতেই ওই সিদ্ধান্ত। স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং, অভিষেক মনু সিংভি বা দিল্লির নেতা অজয় মাকেনের মতো কেউ কেউ ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচনের ওপর জোর দিলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য আপত্তি জানান। তাঁদের বক্তব্য, ৮৪ শতাংশ ভোট পেয়ে খাড়গে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। অতএব দলের ঐতিহ্য অনুযায়ী তাঁকেই পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হোক। এ মহলের যুক্তি ছিল, বহু নেতা যোগ্যতা থাকলেও নানা কারণে নির্বাচনে জিততে পারেন না। মনোনয়নপদ্ধতি বজায় থাকলে তাঁরা উপেক্ষিত হবেন না। তাঁদের মনোনীত করলে দলই উপকৃত হবে। এ ছাড়া এ বছর আরও ছয়টি রাজ্যে বিধানসভার ভোট হবে। তার আগে নির্বাচন হলে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব বাড়বে। দলের ক্ষতি হবে।
দলের সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতাকে নিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যসংখ্যা ২৫। ঠিক হয়েছে সংখ্যাটি বাড়ানো হবে। সাবেক সভাপতি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও লোকসভা-রাজ্যসভায় দলের নেতারা সরাসরি কমিটির সদস্য হবেন। এ সিদ্ধান্তের ফলে দুই সাবেক সভাপতি সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী ও রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে (দলের সভাপতি) পদাধিকার বলে সদস্য হবেন। পুরোনো কমিটিতে সভাপতি ও সংসদীয় দলনেতাকে বাদ দিয়ে বাকি ২৩ সদস্যের মধ্যে ১২ জন নির্বাচিত হতেন, ১১ জনকে সভাপতি মনোনীত করতেন। এবার সবাইকে মনোনয়ন করবেন সভাপতি এবং তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে সমাজের সর্বস্তরের নেতাকে। পোড় খাওয়া প্রবীণ কংগ্রেসিদের পাশাপাশি বিশেষ নজর দেওয়া হবে প্রতিশ্রুতিমান নবীনদের। গত বছর রাজস্থানের উদয়পুরে দলের ‘চিন্তন শিবিরে’ ঠিক হয়েছিল, প্রতিটি পর্যায়ে অর্ধেক আসন ৫০ বছরের কম বয়সী নেতাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। প্লেনারি অধিবেশনে তা কার্যকর করা হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।