ভারতে উড়োজাহাজের হোটেলে বোমাতঙ্ক

বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের মহড়া। সম্প্রতি চণ্ডীগড়েছবি: এএনআই

উড়োজাহাজে বোমা রাখার ভুয়া খবরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ব্যতিব্যস্ত। কীভাবে এই উড়ো খবরের মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সতর্ক ও হুঁশিয়ার করে দেওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের অপরাধের শাস্তি বাড়ানোর কথাও সরকার চিন্তা করছে।

গত কয়েক দিনে বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কাছে উড়োজাহাজ বোমা রাখার অন্তত চার শ বার্তা পাঠানো হয়েছে। কোনোটি ই–মেইল মারফত, কোনোটি ফোন করে, কোথাও–বা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে বহু উড়ান বাতিল করা হয়, অগুনতি উড়ানের সময় বদল করা হয়। কোনো কোনো উড়োজাহাজ মাঝ আকাশ থেকে ফিরিয়েও আনতে হয়েছে। ফলে বিমান সংস্থাগুলোর আর্থিক ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনই টেনশনের মধ্যে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। পাশাপাশি সব সময় তটস্থ থাকতে হচ্ছে সরকারকে।

গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থায় এই হুমকিবার্তা পাঠানোর পর ইদানীং শুরু হয়েছে হোটেলে হোটেলে হুমকিবার্তা পাঠানো। কলকাতা, তিরুপতি ও রাজকোটের ২৩টি হোটেলে গত শনি ও রোববার হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠানো হয়। কোনো কোনো বার্তায় আবার হাজার হাজার ডলার দাবি করা হয়েছে। এই হোটেলগুলোর মধ্যে শুধু কলকাতাতেই রয়েছে ১০টি। তিনটি হোটেল রয়েছে তিরুপতিতে, রাজকোটে ১০টি।

কলকাতা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতিটি হোটেলই বিলাসবহুল। খবর পাওয়া মাত্রই বোমা স্কোয়াড সব জায়গায় প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ; কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া যায়নি।

লক্ষণীয়, কলকাতার হোটেলে বোমাতঙ্কের খবর যখন আসে, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে।

গত রোববার বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতির ইসকন মন্দিরেও। মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো এক উড়ো ই–মেইলে বলা হয়, বোমা মেরে মন্দির উড়িয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ অবশ্য তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহজনক কিছু পায়নি।

উড়োজাহাজে বোমা রাখার খবর যে সময় আসতে শুরু করে, সেই সময় ভারতীয় যাত্রীদের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে না চাপার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সক্রিয় ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুন। ভারতে নিষিদ্ধ এই সংগঠনের নেতাকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে ভারত সরকার যুক্ত বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে।

পান্নুন এক বার্তায় জানিয়েছেন, ১ থেকে ১৯ নভেম্বর কেউ যেন এয়ার ইন্ডিয়ার কোনো বিমানে না চাপেন। তিনি বলেছিলেন, শিখ গণহত্যার প্রতিশোধ নিতেই ওই হুমকি।

ভারতে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। এ সময় থেকেই পর্যটনশিল্প রমরমা হয়ে ওঠে। বোমাতঙ্কের কারণে সেই শিল্প কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বড় বড় হোটেলে বোমা রাখার খবর মানুষকে সতর্ক করে তুলছে। দ্রুত এই আতঙ্ক দূর না হলে বাণিজ্যের ক্ষতি হবে বলে হোটেল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বড় বিমান বন্দরগুলোয় ‘বম্ব থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট কমিটি’র বিশেষজ্ঞদের দল মোতায়েন করেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সব সামাজিক মাধ্যমকে নির্দেশ দিয়েছে, এই ধরনের হুমকিবার্তা যেন দ্রুত মুছে দেওয়া হয়। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও যেন দ্রুত নেওয়া হয়। নাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার বাধ্য থাকবে।