‘ট্রেনটি লাইনচ্যুত হলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার ওপর ১০ থেকে ১৫ জন ছিটকে এসে পড়ল। আমি ঘাড়ে ও হাতে আঘাত পেলাম। যখন ট্রেনের বাইরে বের হলাম, দেখলাম চারপাশে মানুষের অঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এখানে একটি হাত পড়ে আছে তো ওখানে একটি পা। একজনের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে।’
কথাগুলো বলছিলেন ভারতের কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের এক যাত্রী। ট্রেনটি গতকাল সন্ধ্যায় ওডিশা রাজ্যের বালাসোর জেলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত ৯০০ জনের বেশি। অনেকেই এখনো ট্রেনের ভেতর আটকা পড়ে আছেন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওডিশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে ছিল। করমন্ডল এক্সপ্রেস ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। করমন্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি ঘটনাস্থলে একটি মালবাহী ট্রেনের বগির ওপরও আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এখনো অনেক মানুষ ট্রেনের ভেতর আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকাজে স্থানীয় লোকজনও হাত লাগিয়েছেন। রাতে অন্ধকারের কারণে উদ্ধারকাজে সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারকে ২ লাখ রুপি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়া হবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বাড়ি ওডিশায়। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজের সফলতা প্রার্থনা করে একটি টুইট করেছেন তিনি। টুইটে ভারতের রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘ওডিশার বালাসোরে দুর্ভাগ্যজনক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়টি জানতে পেরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। উদ্ধারকাজের সফলতা ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।’
গতকালের ট্রেন দুর্ঘটনাটিকে ভারতে গত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বছর দশেক আগে ২০১৩ সালে করমন্ডল এক্সপ্রেস ওডিশার জাজপুর জেলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এবারের দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেটি ছিল মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।