তেলেঙ্গানায় বিজয়ী বিধায়কদের পাশের রাজ্যে কেন নিয়ে যেতে চায় কংগ্রেস

তেলেঙ্গানায় ভোট দেওয়ার পর কালিমাখা আঙুল দেখাচ্ছেন ভোটাররা। ৩০ নভেম্বরছবি: এএনআই

বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস তৎপর হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত, ১১৯ আসনের বিধানসভায় তাঁরা অন্তত ৭০টি আসন পাবেন। কিন্তু কোনো কারণে আসন কম হলেও নতুন নির্বাচিত বিধায়কদের তাঁরা নিয়ে যাবেন পার্শ্ববর্তী রাজ্য কর্ণাটকে, যাতে শাসক দল বিআরএস বিধায়ক ভাগাতে না পারে।

কর্ণাটক কংগ্রেস–শাসিত রাজ্য। সেখানকার উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাবে।

তেলেঙ্গানায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে বিআরএস। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) যথেষ্ট জনপ্রিয়। কিন্তু তিন–চার মাস ধরে ওই রাজ্যে কংগ্রেস নতুন উদ্যমে মাঠে নেমে বিজেপিকে পেছনে ফেলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে। সব হিসাব উল্টে রাজ্য দখলে কংগ্রেস আশাবাদী। বুথফেরত সমীক্ষায় তার প্রতিফলনও রয়েছে। প্রতিটি সমীক্ষাই কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয় স্থানে বিআরএস।

রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি তথা অঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি গত শুক্রবারই আগাম জয় ঘোষণা করে জানিয়ে দেন, ৮০টি আসনে তাঁরা জিতবেন। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ভোটের প্রচারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই তা রূপায়ণের ঘোষণা দেওয়া হবে। কর্ণাটকেও কংগ্রেস ঠিক এমনই করেছিল।

পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হবে আগামী রোববার। তার আগেই কেরালার সংসদ সদস্য শশী থারুর তেলেঙ্গানা জয়ের জন্য রেবন্ত রেড্ডিকে আগাম অভিনন্দন জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস একক গরিষ্ঠ দল হয়েও যদি ৬০ আসনের আশপাশে থেমে যায়, তা হলে সরকার গঠনে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে এআইএমআইএম।

হায়দরাবাদভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলের নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসির সমর্থন নিয়ে (পাঁচ–সাতটি আসন তাঁরা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে) সরকার গড়তে পারেন কেসিআর। ওয়েইসি আগেই জানিয়েছেন, তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হবেন কেসিআর।

ওয়েইসির সমর্থন সত্ত্বেও কেসিআর গরিষ্ঠতা না পেলে বিজেপি কী করবে, সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর এখনো নেই। কংগ্রেসকে রুখতে সে ক্ষেত্রে কেসিআরকে বিজেপি কৌশলগত সমর্থন দেবে কি? বিজেপির কোনো নেতাই এই প্রশ্নের জবাব দেননি। কংগ্রেস যদিও নির্বাচনী প্রচারে বারবার ওই তিন দলের অঘোষিত আঁতাতের অভিযোগ করে এসেছে।

বুথফেরত সমীক্ষা যা–ই দেখাক, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেস ও বিজেপির রাজ্য নেতারা জয় সম্পর্কে নিশ্চিত। তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড়ের ক্ষেত্রে সমীক্ষক দলগুলো যেমন কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের ফল নিয়ে তারা কেউই কিন্তু সেভাবে একমত নয়। ফলে কারা এগিয়ে, তা নিয়ে দোলাচলের পাশাপাশি সংশয়ও প্রবল।

এই পরিস্থিতিতে দুই দলের রাজ্য নেতারা শুক্রবার জোর গলায় নিজেদের জয়ের দাবি জানিয়েছেন। যেমন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, ‘শুরু থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডার প্রচার এবং কেন্দ্র–রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলোর প্রভাব লক্ষ করছি। আমি নিশ্চিত, বিপুল ভোটে বিজেপি জয়ী হবে। রাজ্যে কোথাও কাঁটে কা টক্কর (সমানে সমানে লড়াই) নেই।’

শিবরাজকে উড়িয়ে জয়ের পাল্টা দাবি করেছেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রিত্বের একমাত্র দাবিদার কমলনাথ। আজ শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, দেশ চালাতে ভিশন (দূরদৃষ্টি) দরকার, টেলিভিশন নয়। কংগ্রেসের প্রত্যেক কর্মীকে সজাগ থাকতে হবে, যাতে গণনার দিন শাসক কারচুপি করতে না পারে।’

রাজস্থানের কংগ্রেস নেতারাও জয় সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত। তাঁরা জানিয়েছেন, ৩০ বছর পর এবার প্রথম পালাবদলের রীতি বদলে যাবে। রেওয়াজ বদলে দেবে সুশাসন। যদিও বিজেপির রাজ্য নেতাদের দাবি, মরুরাজ্য তাঁদের কবজায় এসে গেছে। রোববার শুধু তাতে সিলমোহর পড়বে।