মণিপুরে শুধু আদিবাসী অঞ্চলে ১ অক্টোবর থেকে সেনাশাসন

মণিপুরে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় প্রায় প্রতিবাদ–বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে এমনই এক বিক্ষোভে সতর্ক অবস্থায় পুলিশ। ২১ সেপ্টেম্বর
ছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুর রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে আগামী অক্টোবর থেকে সেনাশাসন জারি করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ রুখতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যে বিশেষ আইন প্রয়োগ করা হয়, সেই আফস্পা আইন (সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন—এএফএসপিএ) ১ অক্টোবর থেকে আদিবাসী অঞ্চলে জারি করা হবে। তবে এই আইন জারি করা হবে না বলে ‘অব্যাহত রাখা হবে’ বলাই সংগত। কারণ, মণিপুরে আইনটি দীর্ঘদিন ধরে বলবৎ রয়েছে।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির ‘উল্লেখযোগ্য উন্নতির’ কারণে ২০২২ সাল থেকে আফস্পা ধীরে ধীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই অধ্যুষিত উপত্যকার জেলাগুলো থেকে প্রত্যাহার করে শুধু আদিবাসী অঞ্চলে বলবৎ রাখা হয়। সেনাবাহিনী সরকারের কাছে এক প্রস্তাবে বলেছিল, বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আফস্পা গোটা মণিপুরে জারি করা প্রয়োজন। কিন্তু মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দপ্তর সেই প্রস্তাবে কান না দিয়ে শুধু আদিবাসী অঞ্চলেই আফস্পা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দপ্তর গতকাল বুধবার এক নির্দেশে জানিয়েছে, আফস্পাবিষয়ক ‘স্থিতাবস্থা’ (স্ট্যাটাস কো) বজায় রাখা হবে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নোটিশে বলা হয়েছে ‘রাজ্যপাল গোটা মণিপুর আফস্পার অধীনে রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। তবে ১৯টি পুলিশ থানা ‘অস্থিতিশীল অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে না এবং এই আইনের আওতায় আসবে না। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ছয় মাসের জন্য আইনটি জারি করা হলো।

রাজধানী ইম্ফলসহ উপত্যকার সাত জেলার ১৯টি পুলিশ থানার নামও সরকারি নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার অর্থ মণিপুরের সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এটা আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দিলেন, মণিপুরে সহিংসতা কুকি-চিন-জোমি প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের কারণেই ছড়াচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের এই সংঘর্ষে কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বসবাস করে, এমন অঞ্চল স্থিতিশীল রয়েছে বলেই মনে করছেন সরকার। যদিও ভারতের সেনাবাহিনী চেয়েছিল, গোটা মণিপুরেই আফস্পা জারি করা হোক। মেইতেই গোষ্ঠী হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুসারী।

আরও পড়ুন

মণিপুর সরকার এই নির্দেশিকায় এমন একটি মন্তব্য করেছে, যা ‘রীতিমতো অবিশ্বাস্য’ বলে মনে করছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুটি প্রধান সংগঠনের একটি, আদিবাসী ঐক্য কমিটি। নির্দেশিকার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাজ্য সরকার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর মনে করছে, সহযোগী নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যস্ত থাকায় (পরিস্থিতির) বিশদ মূল্যায়ন এখনই সম্ভব নয়। আরও বিশদ মূল্যায়ন ছাড়া এই জাতীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত হবে না। তাই এই মুহূর্তে রাজ্যের ‘অস্থিতিশীল এলাকা’–সম্পর্কিত অবস্থা পর্যালোচনা করা যাচ্ছে না।’ স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দেশ মেনে নিতে পারছে না ঐক্য কমিটি।

আদিবাসী ঐক্য কমিটি মনে করছে, উপত্যকার ১৯টি থানা এলাকা ‘অশান্ত এলাকা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত না হওয়ার কারণেই অতীতে সহিংসতা ছড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ছড়াবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে ঐক্য কমিটি এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ‘জাতিগত নির্মূলের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।’

আরও পড়ুন

ঐক্য কমিটি অভিযোগ করেছে, উপত্যকায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু সংগঠন কুকি-জো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদীরা সামরিক বাহিনীর পোশাকে আইনের সুযোগ নিয়ে এই কাজ করছে। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও আফস্পা শুধু আদিবাসী অঞ্চলে অব্যাহত থাকছে। ফলে যে অঞ্চলে আদিবাসী মানুষ থাকেন না, সেখানে সহিংসতা রোধে নিরাপত্তা বাহিনী আরও অসহায় হয়ে পড়বে। রাজ্যের সব অঞ্চলে আফস্পা  জারি করতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে ঐক্য কমিটি। ভবিষ্যতে মণিপুর আরও অশান্ত হবে বলেই মনে করছে আদিবাসী ঐক্য কমিটি।