সিএএ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রর সমালোচনাকে ‘অবাঞ্ছিত’ বলল ভারত
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাকে ‘অবাঞ্ছিত’ বলেছে ভারত। এদিকে এই আইনটি স্থগিত রাখার আবেদন গ্রহণ করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আজ শুক্রবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মামলা গ্রহণ করে ১৯ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেন।
এই আইন পাস করার সময় থেকেই দেশে–বিদেশে এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। আইন চালু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের উত্তরে এই বিষয়ে তাঁর দেশের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘১১ মার্চ ভারত সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এই আইন কীভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং আইন অনুযায়ী সব সম্প্রদায়ের প্রতি সমান আচরণ করা মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতি।
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার উত্তর দিতে অবশ্য দেরি করেনি ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে শুক্রবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে যা বলেছে তা না জেনে বলেছে। ওই মন্তব্য অবাঞ্ছিতও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন। কেড়ে নেওয়ার নয়। যাঁরা রাষ্ট্রহীন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া, মানবিক অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া এর লক্ষ্য। মুখপাত্র জানান, মানবাধিকার রক্ষায় ভারতের ঐতিহ্য চিরকালীন। এ জন্য ভারত দায়বদ্ধও। সবচেয়ে বড় কথা এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতিসংঘও এই আইনকে ‘মৌলিক দিক থেকে বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস রয়টার্সকে বলেছে, আমরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। চরিত্রগতভাবে সিএএ আইন বৈষম্যমূলক। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা ভঙ্গ করছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে এটা বলবৎ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিএএর সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। শুক্রবার তারা বলেছে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি না করা ও সাম্যের যে মূল্যবোধ ভারতীয় সংবিধানে বলা হয়েছে, এ আইন সেই ধারণায় বিরাট ধাক্কা। মানবাধিকার রক্ষার দায়বদ্ধতার পক্ষেও এই আইন বেমানান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অব ইন্ডিয়ার পক্ষে আকার প্যাটেল এ কথাও বলেন, এই আইন ধর্মান্ধ। এই আইন ধর্মীয় বৈষম্যকে বৈধতা দিচ্ছে। এটা করাই উচিত হয়নি। এই আইন রূপায়ণের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে ভারতের সরকার দেশ–বিদেশের নাগরিক সমাজের সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতেই রাজি নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আবেদন গ্রহণ
২০১৯ সালে সিএএ পাস হওয়ার পর ওই আইনের বিরোধিতা করে দুই শতাধিক মামলা দায়ের হয়। ১১ মার্চ সেই আইন চালু করা হয়েছে। ১২ মার্চ ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ওই আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ দেওয়ার জরুরি আবেদন জানায়। ওই দলের পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বাল দ্রুত স্থগিতাদেশ চেয়ে বলেন, একবার নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে আর তা বদল করা যাবে না। চার বছর অপেক্ষার পর ভোটের ঠিক আগে কেন ওই আইন চালু করা হলো, সেই প্রশ্নও সিব্বাল তুলে অন্তর্বর্তী শুনানির আবেদন জানান।
সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, সরকার কাকে নাগরিকত্ব দেবে সেই প্রশ্ন তোলার কোনো অধিকারই আবেদনকারীর নেই। প্রধান বিচারপতি মামলাগুলো গ্রাহ্য করে বলেন, মোট ২৩৭টি আবেদন জমা পড়েছে। সব মামলা একসঙ্গে শোনা হবে।
আইন চালু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সরকার কোনোভাবেই এই আইন প্রত্যাহার করবে না। বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইন সংবিধানের মৌলিক ভাবধারার বিরোধী। এই আইনে ধর্মীয় আধারে শরণার্থীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
সিএএ অনুযায়ী ভারত সরকার ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি ও জৈনদের নাগরিকত্ব দেবে। কিন্তু একই কারণে ওই সময়ের মধ্যে ওই দেশগুলো থেকে চলে আসা মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।