বাম জমানার শেষ সেনাপতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল
বৃহস্পতিবার সকালে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন পশ্চিমবঙ্গের এক সৎ, নির্লোভ ও আদর্শবাদী রাজনীতিক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজীবন অনাড়ম্বর দিন যাপন করা এক কমিউনিস্ট নেতা তিনি। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর তাঁর মরদেহ রাখা হয় কলকাতার হিমঘর পিস ওয়ার্ল্ডে।
গতকাল শুক্রবার সকালে তাঁর মরদেহ তপশিয়ার পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বের করে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে আসা হয় কলকাতার রাজ্য বিধানসভা ভবনে। সেখানে মরদেহ রাখা হয় আধঘণ্টার মতো। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলের নেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, তৃণমূল ও বিজেপির বিধায়ক এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে একে একে শ্রদ্ধা জানান। ফুল ও স্যালুট দিয়ে তাঁরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বিধানসভা ভবনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সিপিএমের রাজ্য দপ্তরে। লাল ফুল আর লাল পতাকায় আচ্ছাদিত বুদ্ধদেবের মরদেহের কফিন সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেখানে রাখা হয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রীকে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। ফুলমালা হাতে শত শত মানুষের বিশাল লাইন পড়ে যায়।
এখানে শ্রদ্ধা জানান সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতা প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, সিপিএম নেতা বিমান বসু ও রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। শ্রদ্ধা জানান কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। এতে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, ক্রীড়া ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। এখানে বুদ্ধদেবের মরদেহ তিন ঘণ্টা রাখা হয়।
এরপর বিকেলের দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতার দীনেশ মজুমদার ভবনে। এই ভবনেই রয়েছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের রাজ্য দপ্তর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই ছিলেন যুব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। আর সভাপতি ছিলেন তাঁর বন্ধু দীনেশ মজুমদার। এখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিকেল ৪টায় তাঁর মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রা হয়।
শোকযাত্রা শেষে বিকেল ৪টার তাঁর মরদেহ দান করা হয় শিয়ালদহের কাছে এনআরএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁর মরদেহ চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণা কাজে ব্যবহারের করা হবে। এর আগে শুক্রবার সকালেই তাঁর দুটি চোখ দান করা হয়। ওই চোখের কর্নিয়া পেয়ে দুজন চোখে আলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তবে যাদের ওই কর্নিয়া দান করা হয়েছে, তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ২০১০ সালে সিপিএমের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ কলকাতার পিজি হাসপাতালে দান করা হয়েছিল।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শোক
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর অগণিত রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও নাট্যকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। সবাই তাঁর সততা, নিষ্ঠা, নির্লোভের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, সাবেক বিচারপতি শ্যামল সেন সহ রাজ্যের বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ।
শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতি জগতের অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্র প্রসাদ সেন গুপ্ত, মমতা শংকর, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা দেব অধিকারী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, শংকার চক্রবর্তী, চৈতী ঘোষাল,পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, পরিচালক অনীক দত্ত, অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, পরিচালক অরিন্দম শীল, অভিনেতা জিতু কমল, নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন প্রমুখ। সকলেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আত্মার মঙ্গল কামনা করেছেন।