ভারতের বেঙ্গালুরুতে দুই শিশুর দেহে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত

মুম্বাইয়ের গুরুকুল স্কুল অব আর্টের এক শিক্ষক মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এইচএমপিভি ভাইরাসের বিষয়টি চিত্রশিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরছেন। ৪ জানুয়ারিছবি: এএনআই

করোনাভাইরাসের পর নতুন উপদ্রবের নাম ‘হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস’ বা (এইচএমপিভি)। করোনার মতো এবারও চীনে প্রথম শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে দুই শিশুর শরীরে ওই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চিন্তার এটাই, দুই শিশুর পরিবারের কেউই বিদেশে যাননি।

দুই শিশুর একজনের বয়স তিন মাস। তাকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যজনের বয়স আট মাস। সে বেঙ্গালুরু ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে।

ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) আজ সোমবার নিশ্চিত করেছে, ওই দুই শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশব্যাপী শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে আইসিএমআরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দুই শিশুর দেহে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

কর্ণাটকের শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, শহরে শ্বাসজনিত কষ্ট বেড়েছে। বাতাসে অনেক ধরনের রোগজীবাণু ঘুরছে। অন্যদের মধ্যেও ‘এইচএমপিভি’ আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি সেই সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত রোববারই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘এইচএমপিভি’ নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। শীতকালে স্বাভাবিক কারণেই ফ্লু হয়। চীনে যে ভাইরাস বা জীবাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে, তা আরএসভি এবং এইচএমপিভি। এ মৌসুমে তা স্বাভাবিক। তবে সতর্ক থাকা সব সময় জরুরি। এইচএমপিভির প্রথম সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ২০০১ সালে।

দিল্লি সরকার অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। সব হাসপাতালকে জানানো হয়েছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা–জাতীয় সব রোগী এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা নিয়ে যাঁরাই ভর্তি হবেন, তাঁদের যেন নিবিড় পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে রোগীকে আলাদা করে সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে।

সরকার যদিও বলেছে, এ ধরনের রোগী এ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে মোটেই বেশি নয়। তবু সাবধানতার মার নেই। সেই কারণে সারা দেশে এইচএমপিভি জীবাণু ধরার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। যে পদ্ধতি ও ‘কিট’ দিয়ে ওই জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব, তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে। শঙ্কা যাতে দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, সে জন্য চেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখা হবে না।

সেই সঙ্গে এ কথাও বলা হচ্ছে, অযথা ভয় পাওয়া বা আতঙ্ক ছড়ানোও ঠিক নয়। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আশঙ্কা দেখা দেয়নি।

এইচএমপিভি জীবাণুর পাশাপাশি এভিয়ান ফ্লুর প্রকোপও দেখা গেছে। পক্ষীবাহিত এই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ৩টি বাঘ ও ১টি চিতাবাঘের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর দেশের সব চিড়িয়াখানায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ওই পশুদের উদ্ধারের পর একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তাদের চিকিৎসা চলছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই ভাইরাসের পোশাকি নাম ‘এইচ৫এন১’। ওই জীবাণু খুবই সংক্রামক।