আসামের ‘পিরামিড’ মৈদাম সমাধিক্ষেত্র, ঠাঁই পেল ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়

উত্তর–পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের রাজাদের সমাধিক্ষেত্র ‘মৈদাম’ জাতিসংঘের ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেছবি: ভাস্কর মুখার্জি

উত্তর–পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের রাজাদের সমাধিক্ষেত্র ‘মৈদাম’ যেন এক টুকরো পিরামিড। প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো এসব সমাধিক্ষেত্র জাতিসংঘের ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত শুক্রবার এই স্বীকৃতির দেওয়া হয়।

পূর্ব আসামের পাটকাই পর্বতমালার পাদদেশে চিড়াইদেও জেলায় রয়েছে অহম শাসকদের এই সমাধিক্ষেত্র বা স্তূপ। শিবসাগর শহর থেকে এই মৈদামের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার।

অহম রাজাদের সমাধিস্থ করা হতো একেবারে পিরামিডের কায়দায় নির্মিত এসব স্থাপনায়। তবে একেবারে মিসরের পিরামিডের মতো নয়। আসামের মৈদাম তৈরি করা হতো ইট, বালু, মাটি আর কাঠ দিয়ে। উঁচু ঢিবি বা পাহাড়ের ছোট টিলার মতো। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়া হতো। কালের চক্রে এই মৈদাম ঢেকে যায় ঘাস আর গাছগাছালিতে। সব মিলিয়ে সন্ধান পাওয়া গেছে ৯০টি মৈদামের। এই মৈদামকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় আসামে চলছে আনন্দের বন্যা।

এত দিন মানুষের কাছে এই মৈদামের গুরুত্ব না মিললেও এবার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পাওয়ায় পর্যটকেরা নতুন করে ছুটছেন আসামের চড়াইদেও জেলার মৈদাম দেখতে।

উত্তর–পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের রাজাদের সমাধিক্ষেত্র ‘মৈদাম’ যেন এক টুকরো পিরামিড
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মৈদামের পাশাপাশি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেল আসামের কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান ও মানস জাতীয় উদ্যান।

গত বছর এই মৈদামগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। শুক্রবার ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪৬তম অধিবেশনে এই মৈদাম সমাধিক্ষেত্রকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মৈদাম আদতে ছিল গোপন কক্ষ, যাকে বলা হয় চউচালি। এই কক্ষ বেশির ভাগ সময়ই দোতালা হতো। এর ওপর ইট, কাদা ও মাটি দিয়ে গোলাকার স্তূপ তৈরি করা হতো। স্তূপের ভেতর প্রবেশের জন্য থাকত একটি সুড়ঙ্গ। কালের চক্রে এই মৈদামের ওপর ঘাস ও গাছগাছালি জন্মে ছোট টিলার রূপ নিয়েছে।

সমাধিক্ষেত্র ‘মৈদাম’–এর ভেতরের অংশ
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পরবর্তী সময়ে খননকার্য চালিয়ে পিরামিডের মতো বিভিন্ন সামগ্রীর সন্ধান মিলেছে। সে সময় রাজাদের মৃতদেহের সঙ্গে সমাধিতে তাঁদের ব্যবহৃত প্রিয় সামগ্রী রাখা হতো। তাই খনন করে পাওয়া যায় রাজকীয় প্রতীক, কাঠ, লোহা ও হাতির দাঁতের সামগ্রী, সোনার গয়না, সিরামিকের সামগ্রী এবং রাজাদের অস্ত্র ও বস্ত্র। শুধু একটি মৈদামে মিলেছে রাজাদের দেহাবশেষ। সর্বোচ্চ মৈদামটির উচ্চতা ২০ মিটার।

আসামের চড়াইদেওর এই মৈদামকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় ভারতের সংস্কৃতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত ধন্যবাদ দিয়েছেন ইউনেসকোকে।