অর্ধশতকের সম্পর্ক ছিন্ন করে গুলাম নবী আজাদ কংগ্রেস ছেড়ে চলে যাওয়ার পরদিন শতাব্দীপ্রাচীন দলের শীর্ষ নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বললেন, রাহুল গান্ধীর ওপর জোর খাটিয়ে দল তাঁকে সভাপতি পদ গ্রহণে বাধ্য করবে। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতা শনিবার বলেন, এই মুহূর্তে রাহুল ছাড়া আর কেউ নেই যাঁকে দলের সবাই এক ডাকে জানেন ও চেনেন। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি সবার কাছে গ্রহণীয়।
সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাড়গে বলেন, ঠিক যেভাবে দলের নেতারা এক দিন সোনিয়া গান্ধীকে দায়িত্ব নিতে রাজি করিয়েছিলেন, সেভাবে রাহুলকেও রাজি করানো হবে। দলের স্বার্থে রাহুল ছাড়া ওই দায়িত্ব গ্রহণের মতো দ্বিতীয় কেউ নেই।
গুলাম নবী আজাদ যে ক্ষুব্ধ সে বিষয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ মহলে কোনো দ্বিমত ছিল না। ‘জি–২৩’–এর নেতৃত্ব দেওয়ার সময় থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর মতো একজন নেতা, যিনি গত ৪০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্বশীল পদে থেকেছেন, তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে রাহুল গান্ধীকে এভাবে আক্রমণ করবেন, সে ধারণা অনেকেই করতে পারেননি। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ তাই আজাদের ‘ডিএনএ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আজাদের পদত্যাগের পর তিনি বলেছেন, যাঁকে দল জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী করেছে, ইন্দিরা গান্ধী থেকে মনমোহন সিং পর্যন্ত চার চারজন প্রধানমন্ত্রীর আমলে যিনি কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন, যাঁকে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, রাজ্যসভার বিরোধী নেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনায় তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তাঁর চরিত্রের স্বরূপ। জয়রাম বলেন, এতদিন যিনি নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন, ‘চাটুকারিতা’ করে গেছেন, রাজ্যসভার মনোনয়ন না পেয়ে তিনিই এখন সেই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক কথা বলছেন। বিশ্বাসঘাতকতার এ এক অদ্ভুত নিদর্শন।
গুলাম নবীর কংগ্রেস ত্যাগ জম্মু–কাশ্মীরের রাজনীতিকে এক নতুন বাঁকের মুখে দাঁড় করিয়েছে। তাঁর সঙ্গে দলত্যাগ করেছেন কাশ্মীরের আটজন কংগ্রেস নেতা, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক তিন মন্ত্রী ও সাবেক তিন বিধায়ক। পদত্যাগপত্রে আজাদ নিজেই নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শনিবার জানা গেছে, ১৫ দিনের মধ্যেই তিনি নতুন দল গড়বেন এবং বিধানসভার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আজাদের সঙ্গে দলত্যাগী নেতা জি এম সরুরি শনিবার জম্মুতে বলেন, আজাদ ৪ সেপ্টেম্বর জম্মু–কাশ্মীরে যাবেন। নতুন দল গঠনের বিষয়ে অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে তাঁদের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হবে জম্মু–কাশ্মীরকে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার পর বিজেপি নানাভাবে চেষ্টা করছে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার আসন বণ্টনের অসাম্য দূর করতে। এ লক্ষে৵ বিধানসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে জম্মু অঞ্চলের আসন সংখ্যা করা হয়েছে ৪৩, কাশ্মীর উপত্যকার ৪৭। কেন্দ্রের সীমানা এমনভাবে স্থির করা হয়েছে, যাতে মুসলমান আধিপত্য কমানো যায়। গুলাম নবীর কংগ্রেস ত্যাগ এই ক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষে সহায়ক হতে পারে। তিনি নতুন দল করলে মুসলমান ভোট ভাগ হবে। তাঁর নতুন দলের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া না হলেও বিজেপির লাভ হবে মুসলমান ভোট ভাগাভাগিতে। এ পরিস্থিতি উপত্যকার দলগুলোকেও নতুনভাবে ভাবাতে বাধ্য করবে। তারা ‘গুপকর জোট’ হিসেবে ভোটে লড়বে নাকি পৃথকভাবে—সেই সিদ্ধান্ত ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিএম ও পিপলস কনফারেন্সকে নিতে হবে।
কংগ্রেসের ‘ভারত জোড় যাত্রা’ শুরু হবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে। তার আগে গুলাম নবী আজাদের দলত্যাগ একটা বড় ধাক্কা। সেই অর্থে আজাদ জনপ্রিয় নেতা নন। তাঁর অনুগামী সংখ্যাও যে বিপুল তা–ও নয়। জম্মুর বাইরে তাঁর প্রভাব যৎসামান্য। নিজের রাজ্য থেকে ভোটে জিতে নেতা তিনি হননি। কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় এসেছিলেন মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম। রাজ্যসভাই ছিল তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু কংগ্রেস রাজনীতিতে অবশ্যই তিনি বড় নাম। তাঁর দলত্যাগ ‘ভারত জোড় যাত্রা’ শুরুর আগে কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর কাছে নিশ্চিতই এক বড় ধাক্কা।