দাউদ ইব্রাহিমের খোঁজে দুবাইয়ে ভারতের গোয়েন্দা দল
দাউদ ইব্রাহিম আন্ডারওয়ার্ল্ডের গ্যাংস্টার। তিনি দীর্ঘদিন পাকিস্তানের করাচিতে আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করে ভারত। পাকিস্তান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে। এবার পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন দাউদ ইব্রাহিম ও তাঁর ডি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুবাইয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্তকারী দলকে পাঠিয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ)। গোয়েন্দাদের সূত্র ধরে দেশটির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআইএর একটি সূত্র বলেছে, পাঁচ সদস্যের তদন্তকারী দলটি দুবাই প্রশাসনের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিম ও ডি কোম্পানি সম্পর্কে কথা বলবে। দুবাই থেকেই ভারতবিরোধী কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হয় দাউদ ইব্রাহিমের মাধ্যমে। তাই দলটি দাউদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করবে।
এনআইএর কোন কোন কর্মকর্তা দুবাই গেছেন, তা প্রকাশ করা হবে না। তবে এ দলে ভারতে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) কর্মকর্তারা আছেন।
সূত্রটি বলেছে, দাউদ ও ডি কোম্পানির বিরুদ্ধে নথিভুক্ত মামলার তদন্তের পরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মিলেছে। অনেক অভিযুক্ত আসামির বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি এ মামলায় অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থা বিদেশি তদন্তকারী সংস্থার সাহায্যও নিতে পারে, যার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছর ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা দাউদ ইব্রাহিম ও অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে। এনআইএর দল ডন দাউদ ইব্রাহিম ও তাঁর ডি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আগামী দিনে এর সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এনআইএ বলছে, মুম্বাইয়ে হামলা মূল অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিম। কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে লুকিয়ে থেকে দাউদ ইব্রাহিম ও তাঁর আন্ডারওয়ার্ল্ড কোম্পানি সন্ত্রাসবাদ ও মাদক ব্যবসায় জড়িত এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। তাই বিষয়টির গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত এনআইএর কাছে হস্তান্তর করেছিল। মুম্বাই হামলাসংক্রান্ত মামলার তদন্তও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের কাছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মুম্বাইসহ অনেক জায়গা থেকে অনেক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে গত মাসে দাউদ ইব্রাহিমের ভাগনে হাসিনা পারকারের ছেলে আলিশাহ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দাবি করেছেন, প্রথম স্ত্রী মেজাবিনের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক থাকা অবস্থাতেই পাকিস্তানি এক পাঠান নারীকে বিয়ে করেছেন দাউদ। দাউদ ইব্রাহিমের পারিবারিক উত্তরাধিকার তুলে ধরে আলিশাহ বলেন, এই গ্যাংস্টারের স্ত্রী হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
সন্ত্রাসে অর্থায়নের একটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এনআইএ। এতে সংস্থাটি বলেছে, আলিশাহ তাঁর জবানবন্দিতে দাউদের পারিবারিক উত্তরাধিকারের বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, করাচিতে নিজের বাসা বদল করেছেন এই গ্যাংস্টার।
সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে দাউদ ইব্রাহিম ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে এনআইএ। এ মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এনআইএ তথ্য পায়, দাউদ ইব্রাহিম একটি বিশেষ টিম গঠন করছে। এই টিমের সদস্যরা দেশে বড় নেতা ও ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালাতে পারে। তারা বড় শহরগুলোয় সহিংসতাও ছড়াতে পারে।
এই মামলার তদন্ত চলাকালে দাউদ ইব্রাহিমের বোন হাসিনা পারকারের ছেলে আলিশাহর জবানবন্দি রেকর্ড করে এনআইএ। তাঁর জবানবন্দি অনুযায়ী, দাউদ ইব্রাহিমের চার ভাই (দাউদ ইব্রাহিমসহ পাঁচ ভাই) ও চার বোন আছেন।
গত মাসের মাঝামাঝি আলিশাহ বলেন, দাউদ ইব্রাহিম ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। তিনি বর্তমানে করাচির আবদুল্লাহ গাজি বাবা দরগাহর পেছনে রহিম ফাকির নিকটবর্তী প্রতিরক্ষা বাহিনীর এলাকায় বসবাস করেন।
দাউদ ইব্রাহিমের স্ত্রী মেজাবিনের সঙ্গে দুবাইতে ২০২২ সালের জুলাইয়ে দেখা করেছেন বলেও জবানবন্দিতে দাবি করেন আলিশাহ। দুবাইয়ের জাইতুন হামিদ আন্তুলায়তে একটি বাড়িতে থাকেন তিনি।