কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারে জার্মানির পর যুক্তরাষ্ট্র সংশয়ী
ভারতের আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে জার্মানির পর এবার যুক্তরাষ্ট্রও সংশয় প্রকাশ করল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে, তারা ঘটনাবলির ওপর নজর রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় গ্রেপ্তার কেজরিওয়ালের বিচার সুষ্ঠুভাবে দ্রুত শেষ করা হোক। বিচার হোক স্বচ্ছ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত মঙ্গলবার এই খবরটি প্রচার করলেও তারা প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নাম উল্লেখ করেনি। সম্ভবত সে কারণে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য দুদিন আগে জার্মানির মন্তব্য ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার ও তাঁর সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে ভারতে নিযুক্ত জার্মান দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিক জর্জ এঞ্জওয়েলার সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সংশয়ী হয়েছিলেন বলেই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁদের আশা, কেজরিওয়ালের বিচার প্রক্রিয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষিত হবে। তিনি বলেছিলেন, যেকোনো অভিযুক্তের মতো কেজরিওয়ালও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার যোগ্য। কোনো রকম বিধিনিষেধ ছাড়াই তিনি যেন সব ধরনের আইনি সহযোগিতা পান।
এ থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে জার্মানির মতো যুক্তরাষ্ট্রের মনেও অনেক রকমের প্রশ্ন জেগেছে। সন্দেহ জন্মেছে। তিনি দ্রুত সুবিচার পাবেন কি না, সেই বিষয়েও তারা সংশয়ী। সেই সংশয়ই ঝরে পড়েছে ওই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কালক্ষেপ না করে জার্মান দূতাবাসের উপপ্রধানকে ডেকে পাঠিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। ভারত জানিয়ে দেয়, বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ এবং পক্ষপাতমূলক অনুমান অনভিপ্রেত ও অবাঞ্ছিত। যদিও মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য নিয়ে তারা কিছু বলেনি।
কেজরিওয়ালকে নিয়ে জার্মানির পর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ ভারতের গণতান্ত্রিক আবহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তির জন্য যথেষ্ট অস্বস্তিজনক। কেজরিওয়ালকে নিয়ে জার্মানির কূটনৈতিক মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। মন্তব্যও করেনি। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ওই বিষয়ে ভারত তাদের কী বলেছে, সেটা জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শোনাই ভালো।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে দিল্লির রাজনৈতিক মহল বেশ তপ্ত। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীতে আম আদমি পার্টি বিক্ষোভ দেখায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল। যদিও দিল্লি পুলিশ তাদের সমাবেশই করতে দেয়নি। কেজরিওয়ালের ইস্তফা দাবি করা পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছিল দিল্লি প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব। পুলিশ তাদের বিক্ষোভ মিছিল করতে বাধা দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালকে তাঁর বাড়ি থেকে ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আবগারি নীতি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতে ইডি বলেছে, কেজরিওয়ালই আবগারি নীতির মূল পান্ডা। ১০০ কোটি রুপি তিনি ঘুষ নিয়েছেন।
দিল্লির নিম্ন আদালত কেজরিওয়ালকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। কেজরিওয়াল দিল্লি হাইকোর্টে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করেছেন। আজ বুধবারই তার শুনানি।