ভারতে ১২২ বছরের রেকর্ড ভাঙল ফেব্রুয়ারির গরম, এবার তীব্র দাবদাহের আভাস
ভারতে গত ফেব্রুয়ারি মাসটি ছিল ১৯০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। তবে দেশটির আবহাওয়াবিদেরা আরও উদ্বেগের খবর দিয়েছেন। তাঁরা আভাস দিয়েছেন, আসন্ন মাসগুলো আরও বেশি উষ্ণ হতে পারে। এতে গত বছরের মতো তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ফসল কম হওয়া এবং বিদ্যুৎ–বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি ভারত। তাপপ্রবাহ, ব্যাপক বন্যা ও তীব্র খরার মতো চরম আবহাওয়া পরিস্থিতিতে প্রতিবছর হাজারো মানুষ মারা যায়। কৃষি উৎপাদন কমে গিয়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থা বাড়ে। তাপপ্রবাহের কারণে জলবিদ্যুতের উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যায়। এতে জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ে।
ভারতের আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে মাসিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রার হিসেবে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসটি ছিল ১৯০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। সামনের মাসগুলো আরও উষ্ণ হতে পারে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এস সি ভান বলেন, মার্চ, এপ্রিল, মে—এ তিন মাস ভারতের বেশির ভাগ এলাকায় তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ভারতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো গমের উৎপাদন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ। চীনের পরেই এর অবস্থান। মার্চ মাসের তাপমাত্রা কেমন হবে, তার ওপর গমের ফলন নির্ভর করে।
ভারতে এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে গত বছরের মার্চ মাসটি ছিল সবচেয়ে উষ্ণ। এতে শস্যের ফলন কম হয়েছে এবং দেশটির সরকার রপ্তানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। চলতি মার্চ মাসে উপদ্বীপ অঞ্চল ছাড়া অন্য এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ওপরে থাকার আভাস রয়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে ফলন কম হলে রপ্তানি কমিয়ে দেওয়ার এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলন কম হলে স্থানীয়ভাবে খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার ওপরও প্রভাব পড়বে।
উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ইতিমধ্যে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে রেকর্ড পর্যায়ের কাছে পৌঁছে গেছে। এমন অবস্থায় বিদ্যুৎ–বিপর্যয় ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার।
যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভরশীল, সেগুলোকে গ্রীষ্মকালীন তিন মাস পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে কাজ চালানোর জন্য বলা হয়েছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রণযন্ত্র ও সেচযন্ত্র চালানোর জন্য বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জেনারেটর দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
২০১৫ সাল থেকে ভারতের কয়েকটি রাজ্যকে দাবদাহের কবলে পড়তে দেখা গেছে। তখন থেকে ২০২০ সাল নাগাদ তাপপ্রবাহ বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।