মমতার সঙ্গে বৈঠক না করেই ফিরলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছে। শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এদিকে কলকাতর সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের ওপর হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে মমতার সঙ্গে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪৫ মিনিট পরে চিকিৎসকদের প্রায় ৩০ জনের একটি প্রতিনিধিদল বাসভবনের সামনে যান। কিন্তু তাঁদের দাবি অনুযায়ী বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচারে মমতা রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ অবস্থায় চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আজ আপনারা বলেছিলেন আমার সঙ্গে বৈঠক করতে চান। তাই আপনাদের জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আপনারা কেন আমাকে এভাবে অপমান করছেন? দয়া করে আমাকে এভাবে অপমান করবেন না। এর আগেও আমি আপনাদের জন্য তিনবার অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনারা আসেননি।’

মমতা চিকিৎসকদের কাছে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই এ-সংক্রান্ত বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। মমতা পাল্টা প্রস্তাব দেন বৈঠকটি ভিডিও করা হবে। রায় হওয়ার পর আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ভিডিওটির একটি কপি তাঁদের দেওয়া হবে। কিন্তু চিকিৎসকেরা মমতার এই প্রস্তাবে রাজি হননি।

বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়, শনিবার রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগরের ডিসিপি অনীশ সরকার বলেন, ‘দুই পেশাদার অপরাধী স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে আমরা নিজস্ব সূত্রে জানতে পারি। (এ বিষয়ে) দুই ব্যক্তির আলাপের একটি অডিও ক্লিপও আমাদের হাতে আসে। এই আলাপে তাদের ষড়যন্ত্র বের হয়ে পড়ে।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করেছি। সেটার ওপর ভিত্তি করে একটি মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির নাম সঞ্জীব দাস। তিনি অডিও রেকর্ডিংয়ে নিজের কণ্ঠস্বর থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’

গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তিকে আদালতে তুলে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন করা হবে বলেও জানান ডিসিপি অনীশ সরকার।

এর আগে আজ দিনের বেলায় হঠাৎ স্বাস্থ্য ভবনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে গিয়ে হাজির হন মমতা। সেখানে চিকিৎসকেরা ভিজে ভিজে বিক্ষোভ করছিলেন। মমতা তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের অবস্থা বুঝি। আমি আমার পদ নিয়ে শঙ্কিত নই। রাতভর বৃষ্টি হচ্ছে। আর আপনারা তাতে ভিজে ভিজে বিক্ষোভ করছেন। আমি (আপনাদের নিয়ে) উদ্বিগ্ন। আমি আপনাদের দাবিদাওয়া পুনর্বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। আমি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। একটি সমাধান বের করব। দোষী যে-ই হোক, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। আমি কিছু সময় চাচ্ছি। রাজ্য সরকার আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না।’

গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় শনিবার আবারও চিকিৎসকদের কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান মমতা।