ভারতের চন্দ্রাভিযানে সাফল্যের নেপথ্যে যাঁরা
ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ তৈরিতে সময় লেগেছে চার বছর। করোনা মহামারির সময়ও এর কাজ থামেনি। এই চন্দ্রাভিযান সফল করতে প্রায় এক হাজার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়েছেন। যাঁরা অভিযানের নেতৃত্বে আছেন, চলুন তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিই।
এস সোমনাথ: ভারতের চন্দ্রাভিযানে অবদান রাখা ব্যক্তিদের শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) চেয়ারম্যান। চন্দ্রযান-৩-কে বহন করে মহাকাশে নিয়ে গেছে এলভিএম রকেট (বাহুবলী)। এ রকেটের নকশা করেছেন ইসরোর প্রধান।
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এস সোমনাথ শুধু দক্ষ বিজ্ঞানীই নন, তিনি অভিনেতাও। একটি ‘ইয়ানাম’ নামের একটি সংস্কৃত ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর নামের অর্থ ‘চাঁদের প্রভু’।
উন্নিকৃষ্ণন নাইয়ার: বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের পরিচালক। তিনি একজন দক্ষ মহাকাশ প্রকৌশলী। চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণকারী লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক-৩-এর সফলতার পেছনে রয়েছে তাঁর বিরাট ভূমিকা। পড়ালেখা করেছেন বেঙ্গালুরুর খ্যাতনামা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে।
বীরামুথুবেল: চন্দ্রযান-৩-এর প্রকল্প পরিচালক। ভারতের চন্দ্রাভিযান নিয়েই তাঁর জীবন আবর্তিত। চেন্নাই থেকে প্রযুক্তির ওপর উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। চন্দ্রযান-২ ও মঙ্গলায়ন অভিযানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ল্যান্ডার বিক্রমের অভিযান বিফল হয়। তবে সেই অভিজ্ঞতা তিনি চন্দ্রযান-৩ অভিযানে কাজে লাগিয়েছেন।
কল্পনা কে: করোনা মহামারির সময়ও কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন এই প্রকৌশলী। ভারতের স্যাটেলাইটের উন্নয়নে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনিও চন্দ্রযান-২ ও মঙ্গলায়ন অভিযানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এম বানিথা: চন্দ্রযান-২-এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। তিনি একজন ইলেকট্রনিকস সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ভারতের প্রথম নারী; যিনি চন্দ্রাভিযানে নেতৃত্ব দেন। আগের অভিযানের অভিজ্ঞতা তাঁকে চন্দ্রযান-৩ অভিযানকে সফল করতে সাহায্য করেছে। তিনি গাছপালা ভালোবাসেন, পছন্দ করেন বাগান করতে।
এম শঙ্করণ: ইসরোর ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে। পাওয়ার সিস্টেম ও সোলার অ্যারেতে তাঁর দক্ষতা রয়েছে। স্যাটেলাইট তৈরিতে তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি চন্দ্রযান-১, মঙ্গলায়ন ও চন্দ্রযান-২ অভিযানের জন্য স্যাটেলাইট তৈরিতে যুক্ত ছিলেন।
পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া এম শঙ্করণ চন্দ্রযান-৩-এর তাপমাত্রা ঠিক রাখার দায়িত্বে আছেন। তিনি চাঁদের পৃষ্ঠের প্রতিলিপিও তৈরি করেন, যেখানে অভিযানের ল্যান্ডার পরীক্ষা করে দেখা হয়।
ভি নারায়ণ: লিকুইড প্রপালশন ইঞ্জিন বিশেষজ্ঞ। তাঁর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। এ ল্যান্ডারের সাহায্যে মহাকাশযানকে চাঁদে অবতরণ করা হয়েছে। ভি নারায়ণ খড়গপুরের আইআইটিতে পড়ালেখা করেছেন। চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণকারী লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক-৩-সহ ইসরোর বেশির ভাগ রকেট তৈরিতে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
গতকাল বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভারত। এর আগে চাঁদের বুকে সফলভাবে নভোযান অবতরণ করিয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এখন এ তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে যুক্ত হলো ভারত।