দেশ টালমাটাল হলে সুযোগ নেয় শত্রুরা: রাহুল

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তামিল অভিনেতা ও ‘মাক্কাল নিধি মাইয়াম’ দলের নেতা কমল হাসান
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী মনে করেন, দেশ টালমাটাল হলে শত্রুরা তার সুযোগ নেবেই। তামিল অভিনেতা ও ‘মাক্কাল নিধি মাইয়াম’ রাজনৈতিক দলের নেতা কমল হাসানকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি হালে পানি পাচ্ছে না। কাজের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। দেশের মানুষ নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে ব্যস্ত। এই টালমাটাল অবস্থায় প্রতিপক্ষ অর্থাৎ শত্রুরা সুযোগ নেবেই। সীমান্তে সেই সুযোগটাই নিয়েছে চীন।’

‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র বিরতিতে দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে কমল হাসানের এই কথোপকথন কংগ্রেস প্রকাশ করেছে। কমল হাসান এই যাত্রায় রাহুলের সঙ্গী হয়েছিলেন। ৯ দিনের বিরতির পর মঙ্গলবার থেকে ভারত জোড়ো যাত্রা আবার শুরু হতে চলেছে। ৩১ জানুয়ারির আগে তা শেষ হবে জম্মু–কাশ্মীরের শ্রীনগরে।

প্রায় ২৩ মিনিটের কথোপকথনে চীন প্রসঙ্গে রাহুল ভারত সরকারের নীতির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এই একবিংশ শতাব্দীতে নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিক দৃষ্টিতে বিচার–বিবেচনা করা দরকার। সেখানেই সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ। সীমান্তে কী কী ঘটছে, সেই বিষয় আমরা বারবার শুনছি। ঘটনা হলো, চীন আমাদের ২ হাজার বর্গকিলোমিটার দখল করলেও আমরা কিছুই বলছি না। সেনাবাহিনী স্পষ্ট বলেছে, চীন আমাদের জমিতে গেড়ে বসে আছে অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কেউ ঢোকেনি। এ দ্বিচারিতা আলোচনার টেবিলে আমাদের অবস্থান দুর্বল করেছে। চীনও স্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছে। বুঝেছে, তারা যা খুশি করুক, ভারত কিছু্ই বলবে না।’

কমল হাসানকে রাহুল বলেন, ‘সেনানীদের সঙ্গে আলোচনার সময় চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, “আপনাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা আপনাদের জমিতে নেই।” তাহলে এই আলোচনার অর্থ কী?’ তাঁর মতে, এই মনোভাব ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে।

কেন ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেন, ‘সামাজিক সম্প্রীতি আজকের ভারতে সবচেয়ে জরুরি। এটাই এই শতকের দাবি। সামাজিক সদ্ভাব থাকুক। ভ্রাতৃত্ববোধ থাকুক। একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকুক। বহুত্ববাদই ভারতের শক্তি। নিজেদের মধ্যে শত্রুতা নয়, লড়াই নয়, শান্তি থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর দরকার একটা স্থির দৃষ্টিভঙ্গি। যুদ্ধ করা নয়, এমনভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ আক্রমণ করতে না পারে।’

রাহুল বলেন, ‘দুর্বল অর্থনীতি, অস্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি, ঘৃণা ও ক্রোধের বাড়াবাড়ির সঙ্গে চীনাদের ঘাড়ের ওপর বসে থাকার মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। ওরা বুঝে গেছে আমরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি করছি। সম্প্রীতি নেই। অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তিতে ভুগছি। এ পরিস্থিতিতে তারা যা খুশি করতে পারে। সেটাই হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে চীন যা করছে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়াও ঠিক তা–ই করছে।’

ভারত জোড়ো যাত্রায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে কমল হাসান বলেন, এটাই ঠিক কর্তব্য। মঞ্চ থেকে ভাষণ না দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া, কথা শোনা ও বোঝার চেষ্টা করা। এই যাত্রা এ কারণেই প্রশংসনীয়। হাসান বলেন, শান্তি সবাই চায়। সবাই শান্তিপ্রিয়। অশান্তি তখনই হয়, যখন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি বিনষ্ট করতে চায়।  

কমল হাসান ২০০০ সালে ‘হে রাম’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। কেন সিনেমাটি করলেন রাহুলকে সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বাবা ছিলেন গান্ধীবাদী। কিন্তু কৈশোর পর্যন্ত তিনি গান্ধীজিকে পছন্দ করতেন না। ২৪–২৫ বছর বয়সে গান্ধী সম্পর্কে তাঁর মনোভাব বদলায়। ক্রমেই তাঁর অনুগামী হয়ে যান। এই পরিবর্তনই ‘হে রাম’ চলচ্চিত্র তৈরির মূল কারণ। ছবিতে দেখানো হয়েছে, একজন মহাত্মা গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু গান্ধীজির সংস্পর্শে এসে সে সম্পূর্ণ বদলে যায়। দুঃখ প্রকাশ করে। কমল হাসান বলেন, গান্ধীজিকে মূল্যায়নে তাঁর ব্যর্থতা ওই চলচ্চিত্রের মূল। এটি নির্মাণ করে তিনিও গান্ধীজির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।