কলকাতায় ধর্ষণ-হত্যার শিকার নারীর নাম–ছবি মুছে ফেলার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর মেডিকেল কলেজের এক নারী চিকিৎসককে গত ৯ আগস্ট রাতে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় কলকাতাসহ ভারতের সর্বত্র ওঠা প্রতিবাদের ঝড় এখনো থামেনি। জুনিয়র চিকিৎসকেরা গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, সব দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে এদিনই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ওই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিবিআইয়ের (ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো) দেওয়া প্রতিবেদন উদ্বেগজনক।
চিকিৎসক ধর্ষণ–হত্যার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দায়ের করা এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে প্রথম পর্বের শুনানি হয় গত ২২ আগস্ট। আর গতকাল হয়েছে চতুর্থ পর্বের শুনানি। এ শুনানিতে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন এ ডিভিশন বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্র।
মামলার প্রথম দিনের শুনানিকালে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর ৩০ বছরের জীবনে এ রকম হত্যা মামলা পুলিশের গ্রহণ করার নজির তিনি দেখেননি। আদালত সেদিন চিকিৎসকের মৃত্যু, এফআইআর নিয়ে টালবাহানা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর ইউডি বা অস্বাভাবিক হত্যা মামলা করার বিভিন্ন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন।
গতকালের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, উইকিপিডিয়া থেকে ধর্ষণের শিকার নারী চিকিৎসকের নাম ও ছবি মুছে ফেলতে হবে। ওই চিকিৎসকের বাবার করা অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে হবে সিবিআইকে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সিনিয়র চিকিৎকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। এ ছাড়া নারী চিকিৎসকদের বিশ্রামস্থল সেমিনার হলের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।
সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেন, নারী চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক নেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রাজ্য স্বাস্থ্যসচিব। মামলায় সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
শুনানিতে বিচারপতিরা বলেন, সিবিআই ঘুমিয়ে পড়েনি। তাদের সময় দিতে হবে। তারা বহু কিছুর তথ্য পেয়েছে। সিবিআইয়ের প্রতিবেদন দেখে তাঁরা (বিচারপতিরা) বিচলিত। সেই সঙ্গে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন কলকাতার পুলিশ মাত্র ২৭ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআইকে দিল, পুরো সময়ের দিল না।’ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগোনোর কথা থাকলেও লাগানো আছে মাত্র ৩৭টি।
সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলেছেন, ‘এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ আমরা দেব না, এটা আমাদের উদ্দেশ্যও নয়।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট মামলার প্রথম দিনের শুনানিকালে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর ৩০ বছরের জীবনে এ রকম হত্যা মামলা পুলিশের গ্রহণ করার নজির তিনি দেখেননি।
আদালত সেদিন চিকিৎসকের মৃত্যু, এফআইআর নিয়ে টালবাহানা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পর ইউডি বা অস্বাভাবিক হত্যা মামলা করার বিভিন্ন পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন।
চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর ও ময়নাতদন্ত শেষে কেন ইউডি মামলার রেকর্ড হলো, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত আন্দোলনে যোগ দেওয়া কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ারও নির্দেশ দেন। আরও নির্দেশ দেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার।
‘সব দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে’
গতকাল আর জি কর মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চতুর্থ দফার শুনানি শেষে জুনিয়র চিকিৎসকেরা রাতে এক বৈঠক করেন। পরে গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, সব দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁদের কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্ত, রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবাশীষ হালদার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা কৌস্তভ নায়েককে অপসারণ করেছে।
ইতিমধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমর্থনে গতকাল প্রকৃতিপ্রেমীরা কলকাতা ময়দানে বিভিন্ন স্লোগান–সংবলিত কালো ঘুড়ি উড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। ঘুড়িতে লেখা ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নারী চিকিৎসক হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি।