বরাকে পৃথক রাজ্যের আন্দোলন: উলফার হুমকিতে দমবে না বিডিএফ
দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকায় পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনরত বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (বিডিএফ) বলেছে, হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য দাবিকে দমন করা যাবে না। তাদের আন্দোলন চলবে।
আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম-ইনডিপেনডেন্টের (উলফা-আই) হুমকির প্রতিক্রিয়ায় বিডিএফ এ কথা বলেছে। সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি—তিনটি বাঙালি অধ্যুষিত জেলা নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করছে বিডিএফ।
আসামের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বলে মন্তব্য করে সোমবার বিডিএফ বলেছে, রাষ্ট্রবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার হুমকি অন্তঃসারশূন্য।
গতকাল রোববার রাতে এক বিবৃতিতে উলফা-আই বলে, কোনো অবস্থাতেই আসাম ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। এই বিষয়ে রাজ্যের বাঙালিদের আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এর জন্য পুরো আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষীরাই দায়ী হবে।
বিডিএফের প্রধান আহ্বায়ক প্রদীপ দত্ত রায় বরাক উপত্যকাকে পৃথক করার জন্য সমর্থন জোগাড় করছেন, এমন অভিযোগ এনে উলফা-আইয়ের প্রচার শাখার সদস্য রুমেল হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আসামের বিভিন্ন সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও ঐক্যের মধ্যে বসবাস করছে। কিন্তু প্রদীপ দত্ত রায় বরাক উপত্যকাকে আলাদা করার দাবি তুলে জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দেশভাগ থেকে বরাক উপত্যকা রক্ষা করার প্রশ্নে তাঁর বা তাঁর পূর্বপুরুষদের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা কোনো অবস্থাতেই আসাম বিভক্ত হতে দেব না।’
তবে প্রদীপ দত্তরায় বলেছেন, রাজ্যের বাঙালিদের জবাব চাওয়ার অধিকার উলফার নেই।
আসামের জনসংখ্যার ৩ দশমিক ২ শতাংশ বাঙালি। তবে বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ আসামের বরাক নদী উপত্যকায়। ভারতের নির্বাচন কমিশন গত জুলাই মাসে আসামের ১২৬ সদস্যের বিধানসভা এবং ১৪টি লোকসভা আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া (‘ডিলিমিটেশন’) চূড়ান্ত করেছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি তুলেছে বিডিএফ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিডিএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর আসামের বাংলাভাষী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার আসনসংখ্যা কমে গেছে। এত দিন বরাক উপত্যকায় বিধানসভার আসনের সংখ্যা ছিল ১৫। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আসনসংখ্যা বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সীমানা পুনর্নির্ধারণের পরে তা কমে হয়েছে ১৩।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রদীপ দত্ত রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোড়ো সম্প্রদায়ের পৃথক রাজ্যের দাবি ৫০ শতাংশ, কিন্তু উলফা তার কোনো বিরোধিতা করে না। কারণ, বোড়ো সম্প্রদায়কে ভয় পায়। একইভাবে মধ্য আসামের স্বশাসিত রাজ্য দাবির যে কমিটি তারও বিরোধিতা করে না। কারণ, ওই অঞ্চলে কার্বি ও ডিমাসাদের ভয় পায়। পৃথক কামতাপুর রাজ্যের ডাক দিয়েছেন কোচ রাজবংশীরা। কিন্তু এসব নিয়ে তো উলফাকে কখনো কোনো বিবৃতি দিতে দেখা যায় না। শুধু পৃথক বরাক পৃথকীকরণ নিয়েই তাদের মাথাব্যথা কেন, সে উত্তর তাদের দেওয়া উচিত। এসবের ফলে আমাদের আন্দোলন স্থিতিমিত হবে না।’