দিল্লি অভিযান শেষে বৈঠকের প্রতীক্ষায় বাস্তবের ‘র্যাঞ্চো’
রাজঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে অনশন ভাঙার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশবিদ ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক এখন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় থাকছেন। বুধবার রাতে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, লাদাখসহ হিমালয়ের পরিবেশ রক্ষায় তাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের স্মারকলিপি পেশ করেছেন। এখন তাঁরা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করবেন।
স্মারকলিপিতে প্রধানত তিনটি দাবি করা হয়েছে। লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দান, সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করা, যাতে তাঁরা নিজেদের স্বশাসনের অধিকার পান এবং লে ও কার্গিলের জন্য লোকসভায় পৃথক আসন।
আমির খান অভিনীত জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’–এর নায়ক ‘র্যাঞ্চো’ বাস্তবের সোনম ওয়াংচুক। বুধবার রাতে অনশন ভেঙে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার লাদাখবাসীকে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিশ্রুতি আদায়ের জন্য তাঁরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী অথবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, দু–এক দিনের মধ্যেই বৈঠকের তারিখ জানানো হবে।
পরিবেশ ও রাজনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে লাদাখের দুই এলাকা লে ও কার্গিলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠক হওয়ার কথা। ওই দুই সংস্থা ‘লে অ্যাপেক্স বডি’ ও ‘কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’–এর সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্র আলোচনায় বসবে বলে জানানো হয়েছে। সোনম ওয়াংচুক লাদাখবাসীর জন্য যে আন্দোলন শুরু করেছেন, ওই দুই গণতান্ত্রিক সংস্থা তা পূর্ণভাবে সমর্থন জানিয়েছে। দিল্লি অভিযানের আয়োজকও ওই দুই সংগঠন। ওয়াংচুকদের আটক করার প্রতিবাদে গত মঙ্গল ও বুধবার তারা সমগ্র লাদাখে হরতাল পালনের পাশাপাশি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে।
পাঁচ বছর আগে জম্মু–কাশ্মীর রাজ্য থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের সময় কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু–কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিল। কিন্তু লাদাখের ক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতি দেয়নি। বরং পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার বলেছেন, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও লাদাখিরা রাজ্যের দাবি ছাড়েননি। যদিও তাঁরা বেশি জোর দিচ্ছেন সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার ওপর। সেই দাবি মানা হলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরার উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার মতো লাদাখও স্বশাসনের অধিকার পাবে। আঞ্চলিক জমি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারবে।
লাদাখ ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হলে সেখানকার জমিতে খননকাজ চালানোর একতরফা সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নিতে পারবে না। ওয়াংচুকসহ লাদাখিদের অভিযোগ, লাদাখে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য দেশীয় শিল্পপতিদের ওই এলাকায় ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা কেন্দ্রের রয়েছে। তেমন হলে ভঙ্গুর এই প্রকৃতি ও পরিবেশের ভয়ংকর ক্ষতি হবে। ওয়াংচুক এই পরিকল্পনা রুখতেই আন্দোলন শুরু করেন। ক্রমেই সেই সঙ্গে যুক্ত হয় লাদাখের জনগণের ন্যায্য রাজনৈতিক দাবি। এই আন্দোলনই গত লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীর বিপুল ভোটে হারের কারণ। বৌদ্ধপ্রধান লে ও মুসলিমপ্রধান কার্গিল পূর্ণভাবে ওয়াংচুকের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে।