কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড মামলায় এখনো মূল অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। ওই ঘটনায় তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওই হাসপাতালের সদ্য পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ধর্ষণ–হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ব্যক্তিদের আড়াল করার অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা এবার ‘রাজ্যের দুর্নীতিবাজ মুখ্যমন্ত্রীর’ অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছে। এরই মধ্যে, এ দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে। গতকাল শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন থানা ঘেরাও করে মমতার পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপিও।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য নন। তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, লড়ছেন মমতার বিরুদ্ধে, তাঁর অপশাসনের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, আগামী সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যেন স্বেচ্ছায় সরে যান। নইলে তাঁরা পরের দিন তাঁর সচিবালয় নবান্নে অভিযান করে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করবেন।
মমতাকে পদত্যাগের দাবি আরও জোরাল করতে ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রসমাজ’–এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী একত্র হয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজ্য সচিবালয় নবান্নে ‘অভিযানের’ ডাক দিয়েছে। বলেছে, যেকেউ বিনা ঝান্ডায় এ অভিযানে যোগ দিতে পারেন।
গতকাল কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রসমাজ। সেখানে হাজির হন সংগঠনটির তিন ছাত্র—প্রবীর দাস, সায়ন লাহিড়ি ও শুভঙ্কর হালদার। বীরভূমের প্রবীর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়েন। কলকাতার সায়ন স্থানীয় মওলানা আজাদ কলেজের এমবিএর ছাত্র এবং নদীয়ার শুভঙ্কর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএডের ছাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররা দাবি তোলেন, তাঁরা আর জি করে চিকিৎসক হত্যার মূলচক্রীদের নাম জানতে চান। আরও চান, দোষীদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ঘটনা আড়ালকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য নন। তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, লড়ছেন মমতার বিরুদ্ধে, তাঁর অপশাসনের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, আগামী সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যেন স্বেচ্ছায় সরে যান। নইলে তাঁরা পরের দিন তাঁর সচিবালয় নবান্নে অভিযান করে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করবেন।
ছাত্ররা একথাও বলেন, গত ১৪ আগস্ট নারীদের রাত দখলের আন্দোলনও কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে হয়নি। নারীদের ডাকে সেদিন রাত জাগতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজারো নারী। এবারও নবান্ন অভিযানে সেই রকম সাড়া পাওয়া যাবে। তাঁরা আরও বলেন, মঙ্গলবার বেলা দুইটায় এ অভিযান শুরু হবে। এর আগে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট ও হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে মানুষ জড়ো হবেন। সেখান থেকে মিছিল করে মানুষ নবান্ন অভিযানে শরিক হবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছাত্ররা বলেন, মিছিলে আঘাত করলে রাজ্যজুড়ে আগুন জ্বলে উঠবে।
থানা ঘেরাও বিজেপির
গতকাল বিজেপির ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন থানা ঘেরাও করে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি তোলেন দলটির নেতা–কর্মীরা। এর আগে থানাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করে। তবে বিজেপির আন্দোলনকারীরা প্রতিবন্ধকতা ভেঙে থানার সামনে এসে মমতার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে কয়েকটি থানায় আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষও হয়।
মমতার পদত্যাগের দাবিতে কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা, শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নিউ জলপাইগুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, মেদিনীপুর, কাঁকসা, বারাবনী, বীরভূমের সিউরি, বারাকপুরের নোয়াপাড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা থানা ঘেরাও করা হয়। থানা ঘেরাওয়ে নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাবেক সংসদ সদস্য অর্জুন সিং, বিশিষ্ট আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি প্রমুখ।
এদিকে আর জি করের সদ্য পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের মুখ থেকে ঘটনার তথ্য আদায়ে সিবিআই তাঁকে ৯ দিন ধরে জেরা করেছে। তবে কোনো সদুত্তর পায়নি। অগত্যা অধ্যক্ষসহ ছয়জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষার আবেদন করে সিবিআই। আদালত গতকাল সেই পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন।
এই ছয় সন্দেহভাজন হলেন সন্দীপ ঘোষ, আর জি কর মেডিকেলের চার শিক্ষার্থী ও গ্রেপ্তার সিভিক স্বেচ্ছাসেবী সঞ্জয় রায়ের একজন বন্ধু। এর আগে অবশ্য শিয়ালদহ আদালত গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষার অনুমতি দেন। সঞ্জয় পলিগ্রাফ পরীক্ষার সম্মতিও দিয়েছেন। তাঁকে গতকালই পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে।
অন্যদিকে, আর জি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে একটি মামলা করেছেন ওই হাসপাতালের সাবেক ডেপুটি সুপার আক্তার আলী। মামলা করা হয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে। বিচারপতি মামলাটি তদন্তের জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে। গতকাল হাইকোর্ট সেই তদন্তদলের কাছে থাকা সব কাগজপত্র আজ শনিবার সকালে সিবিআইর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিক্ষোভ–মিছিল
গতকাল কলকাতায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে চিকিৎসক খুনে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শনাক্ত করে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলেন। মিছিল কলেজ স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ধর্মতলায়।
আবার, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আলাদা প্রতিবাদ মিছিল বের করে চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন। তাঁদের এ মিছিল শেষ হয় শ্যামবাজারে।
একই দিন নিউটাউনে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাও বিশাল মিছিল বের করে চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া, কলকাতার ধর্মতলায় ভারতীয় মজদুর সংঘ মমতার পদত্যাগের দাবিতে আলাদা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করে।