আদানি ঘুষকাণ্ড নিয়ে আলোচনার দাবিতে তৃতীয় দিনেও অচল ভারতের লোকসভা
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবিতে আজ বুধবারও লোকসভার দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি হয়ে গেল। ঘুষকাণ্ড ছাড়াও লোকসভা ও রাজ্যসভায় মণিপুর সংকট, সম্ভলের হিংসাসহ যতগুলো মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, একটিও গ্রাহ্য না হওয়ায় বিরোধীরা সভার কাজ চালাতে বাধা দেন। ফলে দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেওয়া হয়। শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম তিন দিনই সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হলো।
আদানি প্রসঙ্গ নিয়ে এর আগেও বিরোধী নেতারা সংসদে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কক্ষেই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’র চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচকে সংসদীয় কমিটিতে হাজিরও করানো যায়নি। শুধু তাই নয়, সংসদের দুই কক্ষের কার্যবিবরণী থেকে ‘আদানি’ শব্দটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ বছরে বিরোধীদের আনা কোনো মুলতবি প্রস্তাবই সংসদে আলোচনার জন্য গৃহীত হয়নি। এমনকি পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত-চীন সংঘর্ষের পরও তা নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কাজেই আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ঘুষসংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের অভিযোগ নিয়ে সরকার যে আলোচনায় রাজি হবে না, বিরোধীদেরও তা জানা। তবু বিরোধীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সংসদের উভয় কক্ষও প্রধানত সেই কারণে অচল রইল।
গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সখ্য নিয়ে কংগ্রেস বরাবরই সমালোচনায় মুখর। এবার তা জোরাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের পদক্ষেপের দরুণ। তথ্য গোপন করে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে সম্পদ সংগ্রহের অভিযোগে সে দেশের আদালত গৌতম আদানি ও তাঁর ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের পদক্ষেপের পর কেনিয়া সরকার আদানির সঙ্গে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিল করেছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আদানির শিল্প চুক্তি নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্রান্সের সংস্থা ‘টোটাল এনার্জি’ আদানির মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গোষ্ঠীকে অর্থ সাহায্য করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ ও ‘ফিচ’ আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার মূল্যায়ন ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ করে দিয়েছে। এর ফলে বাজার থেকে তাদের অর্থ ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বিরোধীদের বক্তব্য, আদানির জন্য বৈশ্বিক দুনিয়ায় ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
আলোচনার সুযোগ দেওয়া না হলে কংগ্রেস যে সংসদের ভেতর ও বাইরে বিক্ষোভ আন্দোলন কর্মসূচি নেবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। বিরোধীরা চায়, আদানি প্রসঙ্গে সরকার সংসদে বক্তব্য রাখুক। কিন্তু সরকার যথারীতি নীরব।
সরকার নীরব থাকলেও বিজেপি আদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি খর্ব করতে এটা বৈদেশিক শক্তির চক্রান্ত। বিশিষ্ট আইনজীবী ও দেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি আদানিদের হয়ে ময়দানে নেমেছেন। আজ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়নি।
আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে আজ এক বিবৃতিতে এমন দাবি জানিয়ে মুকুল বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগই ওঠেনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ‘বিভ্রান্তিকর’।
আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, এ বিষয়ে এই মামলার বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবে।