কংগ্রেস সভাপতি পদের ভোট: গণনার মধ্যেই অনিয়মের অভিযোগ থারুরের
কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচনের গণনার মধ্যেই ভোটে মারাত্মক অনিয়মের অভিযোগ আনা হলো। কেরালার সংসদ সদস্য ও এই নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর এই অভিযোগ আনেন প্রধানত উত্তর প্রদেশের ভোট নিয়ে। তাঁর ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্টের অভিযোগ, ওই রাজ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়নি। যেভাবে ভোট করা হয়েছে, তা জানলে মল্লিকার্জুন খাড়গেও তা হতে দিতেন না। খাড়গে ও থারুর এই পদের অন্যতম দাবিদার।
আগেই ঠিক ছিল মঙ্গলবারের মধ্যে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভোট বাক্স দিল্লিতে দলীয় দপ্তরে চলে আসবে। আজ বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে গণনা। সেই অনুযায়ী সকাল ১০টায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা মধুসূদন মিস্ত্রির তত্ত্বাবধানে সব ভোট বাক্স থেকে ব্যালট পেপার বের করে মেশানো হয়, যাতে কোন রাজ্যের কোন প্রতিনিধি কাকে ভোট দিয়েছেন বোঝা না যায়। দুই প্রার্থীর মনোনীত প্রতিনিধিদের সাক্ষী রেখে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় গণনা।
গণনা ঘিরে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আহামরি তেমন একটা আগ্রহ ও উত্তেজনা অবশ্য কংগ্রেস দপ্তরে দেখা যায়নি। আগ্রহের বেশিটাই ছিল মিডিয়ার। গণনা শুরু হওয়ার পর জানানো হয়, সব ব্যালট পরীক্ষার পর ফল ঘোষণা হবে।
গণনা শুরুর কিছু পরেই শশী থারুরের নির্বাচনী এজেন্ট সলমন সোজ ‘নির্বাচনী অব্যবস্থা ও অনিয়মের’ অভিযোগ আনেন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৈফুদ্দিন সোজের পুত্র সলমন সোজ কংগ্রেস অফিসে জানান, একগাদা অনিয়মের অভিযোগ নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। যেমন বহু ব্যালট বাক্স যেভাবে ‘সিল’ করা দরকার, সেভাবে করা হয়নি। ভোটের সময় যাঁদের উপস্থিত থাকার কথা, তাঁরা ছাড়াও অন্যদের উপস্থিতি নজরে এসেছে। বিশেষভাবে উত্তর প্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে মধুসূদন মিস্ত্রিকে জানানো হয়েছে।
থারুর নিজেও এক চিঠিতে উত্তর প্রদেশের ভোট গণনা স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে মধুসূদন মিস্ত্রিকে লিখেছেন, অভিযোগগুলো গুরুতর। উত্তর প্রদেশের ভোট মোটেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। এই রাজ্যের ভোট অনিয়মের সব সীমা অতিক্রম করেছে। উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
চিঠিতে লেখা হয়, মল্লিকার্জুন খাড়গে নিশ্চিতই জানতেন না, কী বিপুল অনিয়ম উত্তর প্রদেশে হয়েছে। জানলে কিছুতেই তিনি তা হতে দিতেন না। দলের পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ এই ভোটকে এভাবে কলুষিত হতে দিতেন না।
অভিযোগের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব মিস্ত্রি দেননি। তবে কংগ্রেস থেকে বারবার বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা দলের উদ্দেশ্য। সে জন্য দুই প্রার্থীর পক্ষেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ সৃষ্টিতে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট। যদিও থারুরের নির্বাচনী এজেন্টদের বক্তব্য, পরিবর্তনের দাবিতেই এই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। যেভাবে চলে আসছে, সেভাবে চলতে দিতে এবং তা মেনে নিতে থারুর ভোটে দাঁড়াননি।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই কংগ্রেসমহলে এই ধারণা দৃঢ় ছিল যে গান্ধী পরিবারের সমর্থন রয়েছে প্রবীণ খাড়গের দিকেই। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর পুত্র রাহুল বারবার বলেছেন, তাঁরা কোনো পক্ষ অবলম্বন করছেন না। তবু আজ সকালেই দেখা যায়, গণনা শুরুর আগেই কংগ্রেস অফিসের বাইরে ‘সভাপতি’ খাড়গেকে অভিনন্দন জানিয়ে হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে। স্পষ্টতই, দলে যাঁরা স্থিতাবস্থা রক্ষায় বিশ্বাসী, এই ভোটে তাঁরা খাড়গের পক্ষ নিয়েছেন। তাঁকে জেতাতেই তাঁরা সচেষ্ট, কারণ ‘সেটাই নাকি পরিবারের অলিখিত নির্দেশ’।
বেলা বাড়তে কংগ্রেস অফিসের বাইরে টাঙানো এক ঢাউস স্ক্রিনে ভারত জোড়ো যাত্রার লাইভ টেলিকাস্ট শুরু হয়। তামিলনাড়ু থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু হয়ে কেরালা ও কর্ণাটক হয়ে এই যাত্রা গত মঙ্গলবার অন্ধ্র প্রদেশে প্রবেশ করেছে।