ভারতের মণিপুরে সহিংসতায় তিন দিনে ৪ জন নিহত
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত তিন দিনের সহিংসতায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আজ বৃহস্পতিবার মারা গেছেন আরও দুজন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন, যাঁদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই অবস্থায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) আজ চূড়াচাঁদপুরে জরুরি ধর্মঘট পালন করে।
মঙ্গলবার মণিপুরে নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত দুই ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন পাঁচজনের বেশি। তাঁদের মধ্যে দুজন আজ মারা গেছেন। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুর জেলার সীমানায় খৈরেন্টক নামের একটি অঞ্চলে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনপ্রিয় গীতিকার এল এস মাংবোই। বর্তমান সময়ে একটি নির্দিষ্ট গানের জন্য তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। গানটির কথা, ‘আমি গাম হিলো হাম’, যার অর্থ ‘এটা কি আমাদের দেশ নয়’। গানটি চলমান সংঘাতের সময়ই লেখেন তিনি। মৃত অপর ব্যক্তির নাম রিচার্ড হেমখোলিন গুইট। তিনি গ্রাম প্রতিরক্ষা কমিটির একজন স্বেচ্ছাসেবক।
মঙ্গলবার নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর দুই জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও কেন্দ্রীয় যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে। তারপরও ওই অঞ্চলের সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি বলে জানা গেছে। বর্তমানে এসব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এবার মেইতেই প্রধান অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন পাল্টা হামলা চালাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই অভিযোগ করেছেন। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও খোলাখুলিভাবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাইলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারতেন, যা তিনি করেননি। প্রধানমন্ত্রীর মণিপুরে না যাওয়া এবং সহিংসতা রোধের চেষ্টা না করাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের এই সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব।
মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুর জেলার সীমানায় গত ৩ মে থেকে জাতিগত সংঘাত চলছে। এরপর ওই অঞ্চলে একাধিকবার সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতা কখনো একেবারে থামেনি। প্রতিবেশী এই দুই জেলার সীমানায় ধারাবাহিক সহিংসতা চলেছে। চূড়াচাঁদপুরে কুকি-জো সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রভাবশালী। এদিকে পাশের জেলা বিষ্ণুপুরে মেইতেইরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এই সহিংসতায় গত প্রায় চার মাসে দেড় শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। এসব মানুষ অস্থায়ী ত্রাণশিবিরগুলোয় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। সেখানেও যে নিরাপদে আছেন, তা বলা যায় না। রাজ্যজুড়ে এক ত্রাসের পরিস্থিতি অব্যাহত আছে।