ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। তাঁর প্রতিষ্ঠানের জন্য ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউ দিল্লি টেলিভিশনের (এনডিটিভি) অধিকাংশ শেয়ার কেনার পরিকল্পনার কথাটি গত মঙ্গলবার জানান তিনি। তাঁর এই ঘোষণা সংবাদশিল্পে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ, শেয়ার কেনার লেনদেনটি গোপন পদ্ধতিতে সম্পাদন করা হয়।
রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, এভাবে আদানি পরিবার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানটি আইনজীবীদের পরিকল্পিত ছক অনুযায়ী এনডিটিভি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে।
আলোচিত ভিসিপিএল কোম্পানি
এনডিটিভির অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার পরিকল্পনাটি দুই ধাপে সাজায় আদানি গ্রুপ। আর এই পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বল্পপরিচিত বিশ্বপ্রধান কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড (ভিসিপিএল)।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে এনডিটিভির প্রতিষ্ঠাতা রাধিকা ও প্রণয় রায় ভিসিপিএল থেকে ৪০০ কোটি রুপি (৫ কোটি ডলার) ঋণ নেন। বিনিময়ে সংবাদ গোষ্ঠীটির ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা দিয়ে কোম্পানিটির পক্ষে চুক্তিপত্র (ওয়ারেন্টস) জারি করা হয়।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী যেকোনো সময় এই শেয়ার কেনার অধিকার পায় ভিসিপিএল। আদানি গ্রুপ মঙ্গলবার জানায়, তারা ভিসিপিএল অধিগ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে কোম্পানিটির ওই অধিকার প্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ এই শেয়ার দেওয়ার কথাও রয়েছে।
এখন আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন ভিসিপিএলকে এসব শেয়ার হস্তান্তরে দুই দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
আদানি গ্রুপের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর একটি বিবৃতি দেয় এনডিটিভি। এতে বলা হয়, এনডিটিভির সম্মতি ছাড়াই আদানি গ্রুপ এটি করেছে। এনডিটিভির অভ্যন্তরীণ এক নথিতে আদানির এই পদক্ষেপকে ‘একেবারেই অপ্রত্যাশিত’ বলা হয়েছে।
নথিতে আরও বলা হয়, কোম্পানিটি পরবর্তী পদক্ষেপগুলো মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলোই বিধিমালা ও আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
উন্মুক্ত প্রস্তাব
ভারতের পুঁজিবাজার–সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ারের পরোক্ষ মালিকানা থাকায় আদানি গ্রুপ এখন বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে আরও অন্তত ২৬ শতাংশ শেয়ার কেনার উন্মুক্ত প্রস্তাব দিতে পারবে।
পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আদানি গ্রুপ বলেছে, উন্মুক্ত প্রস্তাবে এনডিটিভির প্রতিটি শেয়ারের দাম হবে ২৯৪ রুপি। সব মিলিয়ে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সেটি হলে সব মিলিয়ে জনপ্রিয় এই সংবাদ নেটওয়ার্কের ৫৫ দশমিক ১৮ শতাংশই আদানি গ্রুপের হাতে চলে যাবে।
মঙ্গলবার এনডিটিভির প্রতিটি শেয়ারের দর ৩৬৯ দশমিক ৭৫ রুপিতে গিয়ে ঠেকে। সে হিসাবে আদানি অস্বাভাবিকভাবে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কম দাম প্রস্তাব করেছে। অবশ্য গত মাসেই এনডিটিভির শেয়ারের দরে এই উল্লম্ফন হয়েছিল।
হাতবদলের আলোচনায় ছিলেন না প্রতিষ্ঠাতারা
আদানি গ্রুপের পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসার এক দিন আগে স্টক এক্সচেঞ্জের এক নথি প্রকাশ্যে আসে। এতে এনডিটিভি বলেছে, দুই প্রতিষ্ঠাতা এনডিটিভিতে মালিকানা পরিবর্তন বা তাঁদের শেয়ারের হাতবদলের জন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছেন না।
অভ্যন্তরীণ নথিতে বলা হয়, আদানি গ্রুপের এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে দুই প্রতিষ্ঠাতার হাতে এনডিটিভির শুধু ৩২ শতাংশের মতো শেয়ার থাকবে।
এনডিটিভির ভাগ্যে কী আছে
এনডিটিভি অবশ্য বলছে, তাঁদের সম্মতি ছাড়াই শেয়ার হাতবদলের উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। তবে রয়টার্সের সঙ্গে আলাপে গতকাল বুধবার চারজন আইনজীবী বলেছেন, আদানি গ্রুপ এখন পর্যন্ত চুক্তি প্রক্রিয়ায় তার আইনি অধিকারের মধ্যেই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনডিটিভির হাতে বিকল্প সীমিত।
একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ লেনদেন–সংক্রান্ত আইনি সেবা দেওয়া একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বলেছে, চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠাতারা আদানি গ্রুপের প্রচেষ্টা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন এবং প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
আরেকজন আইনজীবী বলেন, যেহেতু কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠাতারা যখন ভিসিপিএলকে চুক্তিপত্র (ওয়ারেন্টস) দিয়েছিল, তাই এমন সময় যে আসতে পারে, সেটা এনডিটিভির মাথায় রাখা উচিত ছিল। কারণ, এই চুক্তিপত্র অনুযায়ী একটি কোম্পানি শেয়ার অধিগ্রহণ করতে পারে, এমন সম্ভাবনা সব সময় থাকে।
মালিকদের সামনে এখন একটি বিকল্প আছে। সেটা হলো নিজেদের শেয়ার বাড়ানোর চেষ্টায় বেশি দামে নিজস্ব উন্মুক্ত প্রস্তাব দেওয়া।