হাইকোর্ট খারিজ করলেন কেজরিওয়ালের আবেদন, তিহারেই থাকতে হবে তাঁকে

অরবিন্দ কেজরিওয়াল

দিল্লি হাইকোর্টেও স্বস্তি পেলেন না আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চ্যালেঞ্জ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) বিরুদ্ধে তাঁর আবেদন আজ মঙ্গলবার বিকেলে খারিজ হয়ে যায়। বিচারপতি স্বর্ণ কান্তা শর্মা তাঁর রায়ে বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। মুখ্যমন্ত্রীর কোনো আলাদা অধিকার নেই। তাঁর গ্রেপ্তারি বেআইনিভাবে হয়নি।

আবেদন খারিজ হওয়ার কারণে কেজরিওয়ালকে এখন তিহার জেলেই থাকতে হবে। সেই হেফাজতের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এই রায়ের পর কেজরিওয়াল সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, আবগারি নীতি মামলায় ঘুষের অনেক তথ্য–প্রমাণ ইডি পেশ করেছে। তাতে হাওয়ালার কারবারি ও গোয়া নির্বাচনে আপ প্রার্থীর বয়ানও রয়েছে। তাঁদের নাম মামলার স্বার্থে গোপন রাখা হয়েছে।

স্বর্ণ কান্তা শর্মা এ কথাও বলেন, কোনো মামলাতেই রাজনৈতিক প্রশ্ন টানা ঠিক নয়, যেহেতু আইনের চোখে তা অপ্রাসঙ্গিক। এ ক্ষেত্রে তা নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কি না, সেটা আদালতের বিবেচ্য নয়। এটা কেন্দ্র বনাম কেজরিওয়ালের প্রশ্ন নয়, এটা ইডি এবং তার বিরুদ্ধে এক আবেদনকারীর বিষয়। আদালত সাংবিধানিক নৈতিকতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, রাজনৈতিক নৈতিকতা নিয়ে নয়।

বিচারপতি আরও বলেন, কেজরিওয়াল তাঁর আবেদনে তাঁকে গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন; জামিনের নয়।

৩ এপ্রিল বিচারপতি স্বর্ণ কান্তা শর্মা দুই পক্ষের সওয়াল শেষে রায় স্থগিত রেখেছিলেন। কেজরিওয়ালের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি গ্রেপ্তারের ‘টাইমিং’ বা সময় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ওই গ্রেপ্তারি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর বিরোধী। কারণ, লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা থাকলেও ওই গ্রেপ্তারির কারণে সেই অধিকার খর্ব হয়েছে।

কেজরিওয়ালের ওই আবেদনের বিরোধিতা করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাদের আরজি, কেজরিওয়ালই ওই কেলেঙ্কারির মূল পান্ডা। তিনিই ‘কিংপিন’। আইনের চোখে সাধারণ মানুষ ও তিনি সমান। তাদের যুক্তি ছিল, একজন সাধারণ মানুষ অপরাধী হলে তাঁকে জেলে যেতে হয়। কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী বলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, তা হয় না। কেউ টাকা লুট করবেন অথচ ভোট আসছে বলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবেন না—এ যুক্তি খাটে না।

কেজরিওয়ালের যুক্তি ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই ইডির কাছে নেই। টাকার লেনদেনের প্রমাণও তারা দিতে পারেনি। কোনো টাকা উদ্ধারও করতে পারেনি। যদিও ইডির বক্তব্য ছিল, টাকার লেনদেনের প্রমাণ তাদের কাছে আছে। ঘুষের টাকা গোয়া নির্বাচনে খরচ করা হয়েছে।

গত ২১ মার্চ আবগারি (মদ) নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিম্ন আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করেছেন।
কেজরিওয়াল জেলে থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। বিজেপি তাঁর অপসারণের জন্য আন্দোলন করছে। আদালতের শরণাপন্নও তারা হয়েছে তাঁকে বরখাস্তের জন্য। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ হয়েছে। আদালতের মতে, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না, তা ঠিক করার তাঁরা কেউ নন। দেশের গণতন্ত্রই তা ঠিক করবে।