ভারতে ধর্মস্থান মামলায় ‘পক্ষ’ হতে চলেছে কংগ্রেস ও এসপি
ভারতে মন্দির–মসজিদ বিতর্কের অবসানে ধর্মস্থান আইনের রূপায়ণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় অংশ নিতে চলেছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। দুই দলের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এ জন্য দুই দল আগামী সপ্তাহের শুরুতেই স্বতন্ত্র আবেদন জমা দেবে।
বাবরি মসজিদ–রাম জন্মভূমি বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময় ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সরকার ধর্মস্থান আইন প্রণয়ন করেছিল। তাতে বলা হয়, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার দিন দেশের ধর্মস্থান ও উপাসনালয়গুলোর চরিত্র যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। ব্যতিক্রম শুধু অযোধ্যা।
ওই আইন সত্ত্বেও পরবর্তীকালে দেখা গেছে, কাশী, মথুরা, সম্ভল, আজমির শরিফসহ বিভিন্ন স্থানে মসজিদ ও দরগাহর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কাশীতে জ্ঞানবাপি মসজিদে ‘শিবলিঙ্গ’ থাকার দাবি করে মসজিদের জরিপ করানো হয়েছে। অন্যত্রও সেই দাবিতে মামলা হয়েছে। তা নিয়ে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে ধর্মস্থান আইনের প্রয়োগসংক্রান্ত রায় চূড়ান্তভাবে জানাতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানানো হয়।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জ্ঞানবাপি মসজিদের জরিপসংক্রান্ত নিম্ন আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছিলেন, ধর্মস্থান আইনে উপাসনালয়ের চরিত্র বদলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। কিন্তু সেই আইনে এ কথা বলা হয়নি যে উপাসনালয়ের চরিত্র নির্ধারণ বা নিরূপণ করা যাবে না।
এ বিতর্কের মধ্যে গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানান, সুপ্রিম কোর্টে ধর্মস্থান আইনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মন্দির–মসজিদ বিতর্ক নিয়ে নতুন করে কোনো মামলা রুজু করা যাবে না। কোনো আদালত এ–সংক্রান্ত কোনো নির্দেশ জারি করতে পারবেন না। কোনো পদক্ষেপও নেওয়া যাবে না। ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি শুরু হবে।
কংগ্রেস ও এসপি সেই মামলাতেই ‘পক্ষ’ হতে চাইছে বলে দুই দলের সূত্রে জানা গেছে।
এসপি সূত্রে জানা গেছে, ধর্মস্থান আইনের রূপায়ণে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’ হয়ে আবেদন জানানোর বিষয়টি বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু পরে ঠিক হয়, জোট নয়, চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে ওই মামলায় অংশীদার হতে আবেদন জানাতে পারবে। এসপির আবেদন খসড়া করেছেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বাল। কংগ্রেস ত্যাগের পর কপিল সিব্বাল এসপির সমর্থনে রাজ্যসভার সদস্য হন।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, তাদের দলীয় আবেদন চূড়ান্ত। আবেদনকারী কে হবেন, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি শুধু বাকি। কংগ্রেস নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এ মামলর অন্যতম আইনজীবী।
অযোধ্যা মামলার রায় এসেছিল ২০১৯ সালে। সে রায়ে পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চ জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালের আইন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ওই আইনসংক্রান্ত বিভিন্ন আবেদন ২০২০ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন।