ভোটের প্রচারে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংসদ সদস্যের জামিন ঘিরে কাশ্মীরে নতুন বিতর্ক
সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের অভিযোগে জেলবন্দী কাশ্মীরি সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে ভোটের প্রচারে জামিন দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
জম্মু-কাশ্মীরের দুই প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও পিডিপির অভিযোগ, বিজেপিকে সাহায্য করতেই রশিদসহ অন্যান্য সন্ত্রাসবাদীদের ভোটে নামানো হয়েছে, যাতে তাঁদের সমর্থনে কেন্দ্রের শাসক দল সরকার গড়তে পারে।
এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহ ও পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির প্রশ্ন, নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে যখন সংসদীয় কাজ করতে দেওয়া হয় না, সংসদের অধিবেশনেও যোগ দিতে দেওয়া হয় না, তখন কেন রশিদকে জামিন দেওয়া হলো? ভোটে প্রচারের জন্য? তাঁদের মতে, উত্তর একটাই, বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া।
জম্মু–কাশ্মীর বিধাসভার ভোট হতে চলেছে দীর্ঘ ১০ বছর পর। তিন দফার ভোটের প্রথম পর্ব ১৮ সেপ্টেম্বর। শেষ পর্ব ১ অক্টোবর। দিল্লির নিম্ন আদালত রশিদকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন, যাতে তিনি তাঁর দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করতে পারেন।
ইঞ্জিনিয়ার রশিদ গত লোকসভা ভোটে কাশ্মীর উপত্যকার বারামুল্লা কেন্দ্রে ওমর আবদুল্লাহকে ২ লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে দেন। নিজের ভোটে আদালত তাঁকে প্রচারের অনুমতি দেয়নি। দিল্লির তিহার জেলে বন্দী থেকেও জনগণের বিপুল সমর্থন তিনি পান। এরপর তিনি গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টি। বিধানসভা ভোটে এই দল এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। রশিদের ভাইও ভোটে দাঁড়িয়েছেন, সরকারি স্কুলশিক্ষকের চাকরি ছেড়ে।
সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের অভিযোগে ইউএপিএ আইনে ২০১৯ সাল থেকে রশিদ বন্দী। লোকসভা ভোটে জেতার পর শপথ গ্রহণের জন্য মাত্র ছয় ঘণ্টা তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
বস্তুত এবার জম্মু-কাশ্মীরের ভোটে সরকারের চোখে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে চিহ্নিত ও পরিচিতরাই বড় আকর্ষণ। রশিদের দল ছাড়াও ভোটে দাঁড়িয়েছে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামির (জেআই) সঙ্গে যুক্তরাও।
কেন্দ্রীয় সরকার চেয়েছিল, জেআইয়ের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে, যাতে তারা রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরতে পারে। আরএসএসের আপত্তির কারণে তা তারা পারেনি। জেআই তাই নিজেদের ব্যানারে ভোটে লড়ছে না। প্রার্থী করা হয়েছে ‘সাবেক’ নেতাদের। প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিসহ অন্য স্বীকৃত দলের নেতারাও মনে করছেন, এই প্রার্থীদের ওপর ভরসা করেই বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চাইছে। মুসলমান ভোটে বিভাজন ঘটিয়ে উপত্যকা থেকে স্বতন্ত্র এইসব প্রার্থীর কেউ কেউ জয়ী হলে তাঁদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি সরকার গড়তে চায়। বিজেপির ধারণা, জম্মু থেকে যথাসম্ভব বেশি আসন জিততে পারলে এই লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।
ভোট শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তৎপর। গত মঙ্গলবার রশিদের জামিন গ্রাহ্য হওয়ার দিনই ইসি নির্দেশ দিয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের অযথা ধরপাকড় করা যাবে না। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বুথ বদল করা যাবে না। শেষ মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না।
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে বলা হয়েছে, শুধু যাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে একমাত্র তাঁদেরই ভোটের আগে আটক করা যেতে পারে। তবে আটকের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
নির্বাচন কমিশন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দিলেও ভোট-আবহে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের দমনে তৎপর হয়ে উঠেছে। এনসি নেতা ফারুক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অর্থ নয়ছয়ের নতুন অভিযোগ দাখিল করেছে শ্রীনগরের বিশেষ আদালতে। ভোটের মুখে ইডির এই আচরণ বিরোধীদের চাপে রাখতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের পুরনো খেলা বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবার ভোটের আগে বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধীদের এই আচরণ সহ্য করতে হয়। ফারুক আবদুল্লাহকেও করতে হচ্ছে। অথচ গত ১৪ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ হাইকোর্ট ফারুক ও অন্যদের বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগে দায়ের করা ইডির চার্জশিট খারিজ করে দিয়েছিলেন। সেই রায়ে অবশ্য বলা হয়েছিল, ইডি চাইলে নতুন তদন্ত শুরু করতে পারে।
২০০২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ফারুক আবদুল্লাহ ছিলেন জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। ইডির অভিযোগ, সভাপতি থাকাকালীন ফারুক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ১১৩ কোটি টাকা নানাভাবে নয়ছয় করেছিলেন। ব্যক্তিগত ব্যাংক খাতাতেও রেখেছিলেন তিনি।