রাহুল, শশী থারুর কে কোথায় প্রার্থী হচ্ছেন
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারতের কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড থেকেই লোকসভা ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে কংগ্রেসের প্রথম তালিকা প্রকাশিত হয়। তাতে ছত্তিশগড়, কেরালা, কর্ণাটক, লাক্ষাদ্বীপ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলেঙ্গানা ও ত্রিপুরার ৩৯ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষিত হয়েছে।
এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েনাড থেকে রাহুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, সেই জল্পনার অবসান ঘটল। যদিও আমেথি কেন্দ্র নিয়ে জল্পনা থেকেই গেল। কেরালায় মোট আসনসংখ্যা ২০। প্রতিটির প্রার্থীর নাম জানানো হয়েছে।
কেরালার ওয়েনাড থেকে গত লোকসভা ভোটে রাহুল জিতেছিলেন। এবার সেই কেন্দ্র থেকে ‘ইন্ডিয়া’জোটের শরিক সিপিআই আগেই তাদের প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিয়েছিল। সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানির প্রার্থীপদ সমর্থন করেছিল সিপিএমও। সেই দাবি উপেক্ষা করল কংগ্রেস। কাজেই প্রশ্ন উঠে গেল, জোট শরিক বামপন্থীরা এখন কী করবে। সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করলেও কেরালায় তারা একে অন্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
কংগ্রেসের তালিকা থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিজেপিকে হারাতে দলের রাজ্যসভার নেতাদের পাশাপাশি অন্য হেভিওয়েটদের এবার নামানোর চেষ্টা হবে। যেমন ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে রাজনন্দগাঁও কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে। রাজ্যসভার সদস্য ও কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেনুগোপালকেও প্রার্থী করা হয়েছে কেরালার আলাপ্পুজা থেকে। তিরুবনন্তপুরম থেকে জয়ী প্রার্থী শশী থারুর এবারেও মনোনীত হয়েছেন। রাহুলের বার্তা, লোকসভায় আসনসংখ্যা বাড়াতে হেভিওয়েট নেতাদের এবার ময়দানে নামতে হবে। রাজ্যসভা আঁকড়ে থাকা যাবে না। পাশাপাশি গত ভোটে যাঁরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও জিতেছিলেন, তাঁদের সবার ওপর এবারেও ভরসা রাখা হবে। বিজেপির মতো নতুন মুখের সন্ধান কংগ্রেস করবে না।
এই তালিকা প্রকাশের পর এমন মনে করা হচ্ছে যে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রবীণ অশোক গেহলট, কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিং, পি চিদাম্বরম ও নবীন শচীন পাইলটদের ওপর চাপ বাড়ল। প্রকাশিত তালিকায় ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যে দলিত, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, অনগ্রসর ও সংখ্যালঘুদের উপস্থিতির হার ৬১। ৩১ শতাংশের বয়স ৫০-এর কম।
ওয়েনাড থেকে রাহুলের প্রার্থী হওয়া ছাড়া প্রথম তালিকায় উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। জল্পনা থাকছে উত্তর প্রদেশের আমেথি ও রায়বেরিলি নিয়ে। প্রদেশ নেতৃত্ব চাইছে গতবারের মতো এবারও রাহুল আমেথিতে দাঁড়ান। স্মৃতি ইরানিকে চ্যালেঞ্জ জানান। একই সঙ্গে রায়বেরিলি থেকে দাঁড় করানো হোক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। রাজ্যে মোট ১৭টি আসনের মধ্যে এই দুটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি। সোনিয়া গান্ধী শারীরিক কারণে লোকসভা ভোটে না দাঁড়িয়ে রাজ্যসভায় গেছেন। আমেথি ও রায়বেরিলিতে কংগ্রেস কাদের পছন্দ করে, সেই চমক জিইয়ে থাকছে।
এর আবহে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন আগ্রহ। মানেকা গান্ধী ও তাঁর পুত্র বরুণকে বিজেপি এবার যথাক্রমে উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর ও পিলিভিট থেকে প্রার্থী করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিজেপির প্রথম তালিকায় তাঁদের নাম ছিল না। দুজনের ওপর বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব বিশেষ খুশি নয়। বিশেষ করে বরুণের ওপর। কৃষক আন্দোলনের সময় তিনি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি সংবাদপত্রে নিবন্ধ লেখেন।
ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেন। তাতে অনেক সময় দলীয় নীতির সমালোচনা করা হয়। বিজেপি প্রার্থী না করলে বরুণ কংগ্রেসের হয়ে আমেথি থেকে দাঁড়াতে পারেন কি না, এ ধরনের একটা আলোচনা কোনো কোনো মহলে চলছে। যদিও মানেকা-বরুণের দিক থেকে তেমন কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।
কংগ্রেস বলেছে, ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের যত বেশি সম্ভব আসন ছাড়তে তারা প্রস্তুত। শেষ দিন পর্যন্ত আসন নিয়ে সমঝোতার দরজা তারা খুলে রাখবে। কিন্তু ঘটনা হলো, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফার জট এখনো খোলেনি। যেমন জট খোলেনি মহারাষ্ট্রে।