দামি জাফরান নিয়ে কেন চিন্তায় কাশ্মীরের চাষিরা
যত দূর চোখ যায়, উজ্জ্বল বেগুনি রঙের সম্ভার। ভারতের কাশ্মীর রাজ্যের পাম্পোর গোটা বিশ্বে জাফরানের শহর হিসেবে পরিচিত। সেখানে ‘জাফরান ক্রোকাস’ বা আঁশ প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের আয়ের উৎস। বহু প্রজন্ম থেকে সেই ঐতিহ্য চলে আসছে।
ফিরোজ আহমাদের পরিবারও সেই কাজ করে। শরৎকালে ক্রোকাস ফসল তোলার সময় তাঁর ছোট মেয়েও সাহায্য করে। ফিরোজও নিজের বাবা-মাকে সেই কাজে সাহায্য করতেন। কিন্তু তিনি ‘কেসর’ নামে পরিচিত জাফরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন। বিরিয়ানি-কোরমার মতো অনেক পদই জাফরানের ছোঁয়ায় বিশেষ রং ও গন্ধে বাড়তি মাত্রা পায়।
ফিরোজ বলেন, ‘২০০৩ ও ২০০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, এক কানাল বা শূন্য দশমিক এক দুই একর জমি থেকে এক কিলো কেসর পাওয়া যেত। আর এখন এক কিলো পেতে ১৫ কানাল জমি লাগে। ফলে বুঝতে পারছেন, বিগত বছরগুলোতে উৎপাদনের কতটা অবনতি ঘটেছে।’
একই পরিমাণ জাফরান উৎপাদন করতে আরও বেশি জমির প্রয়োজন পড়ছে। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
গবেষক হিসেবে নাশিমান আশরাফ কাশ্মীরে জাফরানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। সেই পাহাড়ি এলাকায় এই মসলা শুধু কোনো সাংস্কৃতিক সম্পদ নয়, মানুষের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে।
ড. নাশিমান বলেন, ‘১৩ বছর ধরে আমি স্যাফরন বায়োলজির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি। চাষিদের ফিডব্যাক অনুযায়ী জাফরান উৎপাদনের অবনতির তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, উচ্চ মানের রোপণের উপাদানের অভাব রয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, কর্ম রট রোগ। তৃতীয় কারণ, সেচব্যবস্থার অভাব।’
কাশ্মীরে জাফরানের জন্য লড়াই
১০ বছরের বেশি আগে ড. নাশিমান এক বড় জিন তথ্যভান্ডার সৃষ্টি করেছিলেন। তাতে ৬০ হাজারের বেশি জাফরান ক্রোকাসের সিকুয়েন্স জমা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে, এমন গাছ সৃষ্টি করাই সেই উদ্যোগের লক্ষ্য।
ড. নাশিমান আশরাফ বলেন, ‘আমরা জিনগুলো শনাক্ত করেছি। এখন আমরা উন্নত স্মার্ট জাফরান সৃষ্টির প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। খরা ও অন্যান্য অ্যাবায়োটিক চাপ সামলাতে এবং কর্ম রট রোগও প্রতিরোধ করতে পারবে সেই জাফরান।’
ইরানের পর ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাফরান উৎপাদনকারী দেশ। ফুলের মধ্য থেকে জাফরানের উপকরণ বের করতে বেশ দক্ষতার প্রয়োজন। এক কিলো খাঁটি জাফরান পেতে হলে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুলের প্রয়োজন হয়। সে কারণে জাফরানের আকাশছোঁয়া দাম। এক কিলোর দাম প্রায় দুই হাজার ইউরো হতে পারে।
ড. নাশিমান আশরাফ কাশ্মীরের উত্তরে ইয়ারিখাহ তাংমার্গ অঞ্চল পরিদর্শন করছেন। তাঁর দল সেখানকার খেতের জন্য ল্যাবে ক্রোকাস টিউবার চাষ করেছে। সেগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সক্ষম।
দীর্ঘ খরা বা আচমকা প্রবল বৃষ্টিপাত হলেও সেই গাছ টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই গাছ কুখ্যাত ‘কর্ম রট’ রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে।
ড. নাশিমান বলেন, ‘আমরা ১০ জেলাতেই সফলভাবে জাফরান চাষ করতে পারি। তবে এবার আমরা সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারণের কথা ভেবেছি। আমরা এখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে জম্মুতে আমাদের স্থাপনায় সেগুলোর মান বিশ্লেষণ করব। এখানে উৎপাদিত জাফরানের মধ্যে খাঁটি জাফরানের সমান পরিমাণ উপাদান আছে কি না, তা পরীক্ষা করব।’
জম্মুতে বহুকাল কোনো জাফরান চাষ হয়নি। তবে জলবায়ু-প্রতিরোধী নতুন ফুলগুলো বেশ ভালোভাবে বেড়ে উঠছে।