আজ বিলকিস বানু, কাল?, ধর্ষকদের মুক্তি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন
ভারতের গুজরাট রাজ্যের বিলকিস বানুর ধর্ষকদের সাজা মওকুফ ও মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে নথিপত্র চেয়েছিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। তবে এ আদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও গুজরাট রাজ্য সরকারের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা ১১ জনের সাজা মওকুফের বিষয়ে নথি উপস্থাপন করতে আগ্রহী না।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ভুক্তভোগী বিলকিস বানু সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ১১ জনের সাজা মওকুফ ও মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করেন। বিলকিস বানু বলেন, এ ঘটনা বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী গৃহবধূ বিলকিস বানু। সে সময় তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ধর্ষকেরা বিলকিসের তিন বছর বয়সী কন্যাসহ পরিবারের সাত সদস্যকে খুন করেছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালে ১১ অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৪ বছর কারাবাসের পর সেই অপরাধীদের সাজা মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। রাজ্য সরকার জানায়, অপরাধীরা ১৪ বছর জেল খেটেছেন। কারাগারে তাঁদের আচরণ, বয়স ও অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও ধর্ষণ ও খুনের আসামিদের শাস্তি না কমানো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত নীতি।
এরপর বিলকিস বানুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট গুজরাটের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারকে সাজা মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ফাইল আদালতে জমা দিতে বলেন। বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিভি নাগারাথনার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ১১ জনের সাজা মওকুফ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের মতে, অপরাধের গুরুত্ব রাষ্ট্রকে বিবেচনা করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বলেন, একজন সন্তানসম্ভবা নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। এটিকে অন্যান্য হত্যা মামলার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কমলার সঙ্গে যেমন আপেলের তুলনা করা যায় না, তেমনি গণহত্যাকে একক হত্যার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এ ধরনের অপরাধ সাধারণত সমাজ ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘটে থাকে। তাই একই রকম ভাবার অবকাশ নেই।
সাজা মওকুফের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ‘এ ঘটনায় সরকার কি মানবিক আচরণ করেছে? কোন বিষয়গুলো সাজা মওকুফের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে? আজ বিলকিস বানু, কাল এমনটা যে কারও সঙ্গে ঘটতে পারে। আপনি, আমি যে কেউ ভুক্তভোগী হতে পারি।’
সরকারের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের সুস্পষ্ট বার্তা, ‘আপনারা যদি সাজা মওকুফের যথার্থ কারণ না দেখান, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা আমাদের মতো করেই উপসংহার টানব।’
এ বিষয়ে আগামী ২ মে সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সাজা মওকুফ হওয়া ধর্ষক শৈলেশ চিমানলাল ভাটকে নিয়ে গত মাসে নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছে।
তাঁকে গুজরাট রাজ্যের দাহোদের বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য যশোবন্ত সিং ভাভোর ও তাঁর ভাই লিমখেদার বিজেপি বিধায়ক শৈলেশ ভাভোরের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেছে। ওই দুই রাজনীতিকের সঙ্গে শৈলেনকে ছবির জন্য পোজ দিতে এবং পূজায় অংশ নিতে দেখা যায়।