বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠকে অযথা কালক্ষেপণ না করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সব দিক থেকে প্রস্তুতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মুম্বাইয়ে দুই দিনের এই বৈঠকে ২৮ দলের নেতাদের ধারণা, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার লোকসভা ভোট এগিয়ে আনতে পারে। এটা করতে পারে বিরোধীরা যাতে সংঘবদ্ধ হতে না পারে। সেই সুযোগ বিজেপিকে দেওয়া যাবে না। সে জন্য অতি দ্রুত রাজ্যওয়ারি আসন সমঝোতা শেষ করতে জোটের নেতারা সম্মত হয়েছেন।
তৃতীয় বৈঠকে ১৪ দলের ১৪ জন নেতাকে নিয়ে এক কো-অর্ডিনেশন বা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটি জোটের খুঁটিনাটি তৈরি করবে। তারাই ঠিক করবে জোটের সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি কী হবে, কোন রাজ্যে আসন ভাগাভাগি কেমন হবে, প্রচারের কায়দাই-বা কেমন হবে।
১৪ দলের সমন্বয় কমিটিতে প্রথমে সিপিএম ছিল না। পরে ওই দলের নাম সংযোজিত হয়। শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা সঞ্জয় রাউত জানান, সিপিএম পরে জানিয়ে দেবে তাদের পক্ষে সমন্বয় কমিটির সদস্য কে হবেন। বাকি সদস্যরা হলেন এনসিপির শারদ পাওয়ার, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন, তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল, শিবসেনার (উদ্ধব) সঞ্জয় রাউত, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাহ, পিডিপির মেহবুবা মুফতি, আম আদমি পার্টির রাঘব চাড্ডা, আরজেডির তেজস্বী যাদব, জেএমএমের হেমন্ত সোরেন, জেডিইউয়ের লালন সিং, এসপির জাভেদ আলী খান ও সিপিআইয়ের ডি রাজা।
দুই দিনের এই বৈঠকে একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তাতে বলা হয়েছে, আসন্ন লোকসভা ভোট ইন্ডিয়া জোট যথাসম্ভব জোটবদ্ধ হয়ে লড়বে। সেই লক্ষ্যে দেওয়া-নেওয়ার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যে আসন সমঝোতা ও ভাগাভাগি অতি দ্রুত চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলোর প্রতি জনতাকে সজাগ করে তুলতে সময় নষ্ট না করে রাজ্যে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে জনসভার আয়োজন করা হবে। প্রচারের মূল অঙ্গ বা ‘থিম’ ঠিক করা হয়েছে। সেটাই জোটের স্লোগান বা ‘ক্যাচলাইন’ হবে ‘জুড়েগা ভারত, জিতেগা ইন্ডিয়া’। এই স্লোগান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দেওয়া।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, লোকসভা ভোটে রাজ্যে রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের যে প্রচার চালানো হবে, সেখানে এই স্লোগান রাখা হবে। ইন্ডিয়া জোটের লোগো বা প্রতীক এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, সেই ভার তাঁরা দেশের জনতার ওপর ছেড়ে দেবেন। জনতাকে লোগো তৈরি করতে বলা হবে। তার মধ্য থেকে জোট সেরাটি বেছে নেবে।
জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনের দিন দিল্লিতে এক বিরাট জনসভার আয়োজন করা হবে। সেখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে জোটের প্রচার। চেষ্টা হচ্ছে, তার মধ্যেই জোটের লোগো চূড়ান্ত করার।
শুক্রবারের বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে বিভিন্ন দলের নেতারা সংক্ষেপে জোট নিয়ে কথা বলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, বিজেপি জোট ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু পারেনি। তারা ইডি, সিবিআইকে আরও নেতাদের পেছনে লাগাবে। তিনি বলেন, সবাইকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। কারাগারেও যেতে হতে পারে। সে জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। অতি দ্রুত আসন ভাগাভাগি শেষ করে প্রচারে ঝাঁপাতে হবে। বিজেপি তৈরি হওয়ার সুযোগ দেবে না।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, এই জোটই বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, বিজেপি মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে জোটে ভাঙন ধরানোর। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে, এই জোটই তাদের পতন ঘটাবে।
রাহুল গান্ধী গত বৃহস্পতিবার আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্তে নতুন করে জেপিসি গঠনের দাবি তুলেছিলেন। শুক্রবার তিনি এই বৈঠকে সেই প্রসঙ্গের উত্থাপন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপির দুর্নীতি ইন্ডিয়া জোটই ফাঁস করবে। বিজেপির জয় অসম্ভব। কারণ, বিরোধী জোট দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের প্রতিনিধি। সমন্বয় কমিটি গড়া হয়েছে। দ্রুত আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করা হবে। বিজেপির পরাজয় অনিবার্য।
রাহুল বলেন, নরেন্দ্র মোদির সরকার গরিবের টাকা পছন্দের শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁদের আরও ধনী করেছে। ইন্ডিয়া জোট সাধারণ মানুষের জন্য, শ্রমিক-কৃষক-দরিদ্রের জন্য প্রতিটি নীতি গ্রহণ করবে স্বচ্ছতার সঙ্গে, যাতে সবার জন্য দেশের প্রগতি হতে পারে। রাহুল বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য যে ছিল না বা নেই, তা নয়। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, দিন যত এগোচ্ছে, মতপার্থক্যও দ্রুত উবে যাচ্ছে। আমরা সবাই আরও কাছাকাছি আসছি।’
কংগ্রেস ছেড়ে চলে যাওয়া আইনজীবী কপিল সিব্বাল শুক্রবার হঠাৎই বৈঠকে হাজির হন বিনা আমন্ত্রণেই। তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘উনি এসেছেন, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’