কলকাতায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্মারকলিপি, চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ থেকে অনেককে আটকের খবর

কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে আজ বুধবার একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে আজ বুধবার একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশের ‘ইসকনের প্রধান পুরোহিত’ হিসেবে উল্লেখ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের কোথাও আজ বুধবার বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। তবে চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ থেকে অনেককে আটক করা হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ চিন্ময়ের গ্রেপ্তারকে অগণতান্ত্রিক, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশের কিছু ‘উপদল’ নিয়মিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ভারতের প্রতিক্রিয়াকে ‘সীমিত’ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে, যাতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে চাপ কমে। স্মারকলিপিতে সই করেছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দক্ষিণবঙ্গের সভাপতি সুবীর সান্যাল।

উপহাইকমিশনের প্রধান ফটকে স্মারকলিপিটি দূতাবাস কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার পর কিছুটা দূরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের মুর্শিদাবাদে ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান কার্তিক মহারাজ সাংবাদিকদের বলেন, তারা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবেন। পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

কার্তিক মহারাজ বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেওয়া না হলে এবং ‘সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার না কমালে’ তাঁরা লাখ লাখ মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে যাবেন। সীমান্ত বন্ধ করে দেবেন। ভারত থেকে যেসব খাদ্য বাংলাদেশে যায়, তা আর যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীও প্রতিবাদ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে সরব হয়েছেন।

স্বামী প্রদীপ্তানন্দ বা কার্তিক মহারাজ মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রধান। কিন্তু তিনি একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হলেও রাজনৈতিকভাবে তিনি যে অত্যন্ত সক্রিয়, তা গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

গত মে মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কার্তিক মহারাজ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সব সাধু সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের একজন মহারাজ আছেন, আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম…কিন্তু এই লোকটা বলেছে, ‘তৃণমূলের (নির্বাচনী) এজেন্ট বসতে দেব না।’ একে আমি সাধু বলে মনে করি না। কারণ, সে ডাইরেক্ট পলিটিকস করছে, দেশটার সর্বনাশ করছে।’

এরপর কার্তিক মহারাজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে একটি আইনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। এর পরে তিনি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে আদালতে টেনে নিয়ে যাননি। তবে আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাই করেছেন।

চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ

দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের উপকূলবর্তী অঞ্চলে রাজা রথিনাম স্টেডিয়ামের সামনে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন বিজেপি, আরএসএস, এবিভিপি, হিন্দু মুন্নানি এবং অন্যান্য হিন্দু সংগঠনের সমর্থকেরা। সেখান থেকে পুলিশ অনেককে আটক করেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।

চেন্নাইয়ে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন চালু করা হয়। উপকূলবর্তী এই অঞ্চল থেকে উপহাইকমিশনের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। উপহাইকমিশন উপকূলবর্তী অলওয়ারপেটে অবস্থিত, যা স্টেডিয়াম থেকে অন্তত সাত কিলোমিটার দূরে। বিক্ষোভকারীরা উপহাইকমিশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেননি বলে চেন্নাই থেকে এক সাংবাদিক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা ও সেখানে হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন হিন্দু মুন্নানী নামে একটি সংগঠনের প্রধান রাজু। সাবেক গভর্নর তামিলিসাই সৌন্দরাজান, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মী কেশভা বিনয়াগম, বিজেপি নেতা কারু নাগরাজন ও ভিপি দুরাইসামি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।